স্থানীয় প্রশাসনের আশকারায় বেপরোয়া ক্ষমতাসীনরা: বিএনপি

ঢাকা ও সিরাজগঞ্জের দুই সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসনের আশকারা পেয়ে ক্ষমতাসীনরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2020, 08:55 AM
Updated : 26 Oct 2020, 08:55 AM

সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়াভাবে বীরদর্পে হামলা চালাচ্ছে বিএনপির প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের উপরে। এছাড়া পুরনো মামলায় কিংবা নতুন গায়েবি মামলার হুমকি দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন-গ্রেপ্তার করার হুমকি দিচ্ছে তারা।

“জাতীয় সংসদের এই উপনির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাগের ডগায় এসব ঘটনা ঘটলেও তারা সেখানে কোনো ব্যবস্থা তো নেয় নাই। বরঞ্চ তাদের আশকারায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং বিএনপির প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে বাধার সৃষ্টি করছে। আমরা এহেন হামলা ও নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।”

এ দুটি ‍উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছে অভিযোগ করে প্রিন্স বলেন, একের পর এক তারা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছে। তবে জনগণ ভালোই বুঝতে পারছে যে, সরকার তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এবং তাদের দলীয় কর্মীদেরকে দিয়ে এই উপনির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ভোট ডাকাতির খেলায় উঠে পড়ে লেগেছে।

“কারণ, সরকারের কাছে একটি বিষয় সন্দেহাতীতভাবে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত। তাই তারা দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সকল নির্বাচন কব্জা করতে চায়। এই দুটি উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের মতোই এই দুটি আসনে প্রহসনের নির্বাচন করতে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা স্থানীয় জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাই, নাগরিকদের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে ভোট ডাকাতির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, নির্বাচনের নামে অপকর্ম করলে তাদেরকেও জবাবদিহি করতে হবে।”

গত কয়েক দিনে ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে দক্ষিণখানে কর্মীসভায় হামলা, কামারপাড়ার রানাভোলায় মহানগর নেতা মোস্তফা জামানের বাড়িতে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলাসহ সিরাজগঞ্জ-১ আসনের নানা ঘটনা তুলে ধরেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

আগামী ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ ও সিরাগঞ্জ- ১ আসনে ভোট হবে। ঢাকা-১৮ আসনে এসএম জাহাঙ্গীর ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজা বিএনপির প্রার্থী।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়’ স্কুলের নাম পরিবর্তনের ঘটনায় এবং গত রাতে ধানমণ্ডির কাছে ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিমের ব্যবহার করা গাড়ি থেকে তার ছেলেসহ কয়েকজন নেমে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার তীব্র নিন্দাও জানান সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

তিনি বলেন, “গতকাল রাতে মিডনাইট নির্বাচনের এক সংসদ সদস্যের ছেলে ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা সশস্ত্র বাহিনীর এক কর্মকর্তা ও তার সহধর্মিনীর ওপর হামলা ও তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত করেছে। আমরা এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।

“এই সরকারের লোকদের ক্ষমতার দাপটে দেশের কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সম্মান নেই। কক্সবাজারের ওসি প্রদীপ কর্তৃক সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা, সিলেটে পুলিশি হেফাজতে রায়হান হত্যাসহ এই ধরনের ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।”

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক আনন্দপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রসুল আপেলকে হত্যার হুমকি ও ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদকে গ্রেপ্তার এবং শারদীয় দুর্গাপূজার প্রাক্কালে ফরিদপুরের বোয়ালমারী, পটুয়াখালী, গাজীপুরে মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন প্রিন্স।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এবিএম মোশাররফ হোসেন, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, হারুনুর রশীদ, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, আকম মোজাম্মেল ও হাসান জাফির তুহিন উপস্থিত ছিলেন।