বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব ছিল: নজরুল

মহামারীকালে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষা না নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার সরকারের সিদ্ধান্ত ‘ভ্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2020, 12:22 PM
Updated : 25 Oct 2020, 12:22 PM

তার মতে, সব কিছু যেহেতু খোলা আছে, সেক্ষেত্রে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোনো না কোনোভাবে পরীক্ষা নেওয়া যেত।

পরীক্ষা না হওয়ায় এই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী জীবনে প্রশ্নের মুখে পড়বেন বলে বিএনপি নেতার আশঙ্কা।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পাশাপাশি বার্ষিকসহ এইচএসসি, জেএসসি, পিইসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

রোববার এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল এই প্রসঙ্গে বলেন, “কেউ বলেছেন অটো পাস, কেউ বলেছেন করোনাকালে করুনার পাস। বিনা পরীক্ষা পাসে কোনো মর্যাদা নাই।

“এটা পাকিস্তান আমলে যারা পাস করেছিল, আমরা তো নিজেরা দেখেছি যে, তাদের সমাজে কোনো মর্যাদা ছিল না। এমনকি বিযে-সাদীতেও এটা নিয়ে কথা হত। এবার আরও বেশি হবে এই কারণে যে, এটা এইচএসসি।”

অটো প্রমোশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিরপেক্ষ শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ ছিল বলে নজরুল মন্তব্য করেন।

“অনেকে বলেছেন, যদি নিরপেক্ষ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের ডেকে তাদের মতামত নেওয়া হত, তাহলে সম্ভবত একটা ভালো পথ বেরিয়ে আসত, যে পথে আমরা দেশকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে পারতাম। তাদের মতামত নেওয়া হয় নাই। সরকার প্রয়োজন মনে করে নাই।”

এই পরিস্থিতিতেও পরীক্ষা নেওয়া যেতে দাবি করে তিনি বলেন, “এই অটো প্রমোশন এটা সরকারের ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত।

“অফিস-আদালত চালু করে দিয়েছেন, কল-কারখানা চালু করে দিয়েছেন, গণপরিবহন চালু করে দিয়েছেন, দোকানপাট চালু করে দিয়েছেন- সব কিছু চালু করে দিয়েছেন, কোথাও কোনো বাধা নেই। সবই চলতে পারবে শুধু পরীক্ষা নেওয়া চলতে পারবে না- এই যুক্তি ধোপে টিকবে না।”

সংক্ষেপে হলেও একটি পরীক্ষা নেওয়া যেত মন্তব্য করে নজরুল বলেন, “আমাদের স্কুল-কলেজ সব কিছু বন্ধ এখন। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অডিটোরিয়াম আছে, অনেক কমিউনিটি সেন্টার আছে। এসব কাজে লাগাতে পারতাম, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে পারতাম, সংক্ষেপে নিতে পারতাম, আংশিকভাবে নিতে পারতাম।”

‘কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, “পৃথিবীর বহু দেশে প্রবৃদ্ধি কম হয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এই প্রবৃদ্ধি কার? আমাদের তথ্য তো বলে বাংলাদেশে শতকরা ৫ ভাগ মানুষের হাতে রাষ্ট্রের শতকরা ৯৫ ভাগ সম্পদ রয়েছে।

“আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা বলে যে, নতুন কোটিপতি তৈরির সবচেয়ে বড় কারখানা হল বাংলাদেশ। এখানে প্রতিবছর নতুন কোটিপতি সৃষ্টি হচ্ছে। আবার এই কোভিডকালে এক কোটি ৬৪ লক্ষ মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে।”

দেশের এই অবস্থা বদলাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে ‘পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট: শিক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রভাব পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুল আহসান।

সংগঠনের আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক লুতফর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রইস উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোহেল রানা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা কাদের গনি চৌধুরী, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতা জাকির হোসেন, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির অধ্যাপক কাজী মাইনুদ্দিন, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন।