আওয়ামী লীগ সরকারের পেছনে ‘বিশেষ শক্তি’: ফখরুল

আওয়ামী লীগ সরকার ‘বিশেষ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে’ দেশে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2020, 07:23 AM
Updated : 25 Oct 2020, 07:23 AM

রাজধানীতে রোববার সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “এই আওয়ামী লীগের সরকার তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেই না। শুধুমাত্র জনগণকে বোকা বানানোর জন্য তারা গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা…প্রকৃতপক্ষে এক ব্যক্তির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।

“আমরা অনেক বলেছি, আমরা এই মানববন্ধন, মিছিল, হরতাল বহু কিছু করেছি।আমরা এখন পর্যন্ত এই সরকারের টনক নড়াতে পারিনি। কারণ তারা বিশেষ বিশেষ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আছে।”

সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “অনেক হয়েছে। এভাবে আর চলতে পারে না। আমরা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই- অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, অবিলম্বে জনগণের চোখের ভাষা পড়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণের উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হবে, সেই ঢেউয়ে আপনারা সবাই ভেসে যাবেন।

“জনগনের উদ্দেশেও বলতে চাই, আপনারা আর নিশ্চুপ হয়ে থাকবেন না। যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আজকে যদি আমরা প্রতিবাদ না করি, রুখে না দাঁড়াই তাহলে ১৯৭১ সালের আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা যে ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই-সংগ্রাম করেছিলাম, যে গণতন্ত্রকে আমরা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিলাম, সেই গণতন্ত্রকে তারা আবার হরণ করেছে। সুতরাং আমাদের সবাইকে আজকে রুখে দাঁড়াতে হবে, অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে হবে, আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তারা আজকে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ, যারা ভিন্নমত পোষণ করে লেখালেখি করে, সোশাল মিডিয়াতে কোনো কথা বলে, তখনই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।যে মামলাতে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী সাহেবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটা মিথ্যা অপবাদ এবং সেই সঙ্গে আইনের একটা অপব্যাখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে বিনা জামিনে আটকে রাখা হয়েছে।

“এটা একটি বিষয় নয়, অনেক সাংবাদিককে নির্যাতন করা হচ্ছে, নিপীড়ন করা হচ্ছে, সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়, তার কোনো বিচার হয় না। আজকে সাংবাদিকরা লিখতে ভয় পান কারণ যে আইন করা হয়েছে সেই আইনগুলোর কারণে তারা আর লিখতে সাহস করেন না।সারাদেশে একটা ভয়ের, একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে- রেইন অব ট্রেরর এবং সেটা করে তারা জোর করে বন্দুকের জোরে ক্ষমতার জোরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে।”

অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজী, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের মুক্তি এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই নির্বাচন কমিশন ও সরকার যৌথভাবে নির্বাচনকে তাদের একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যে। তারা নির্বাচন নির্বাচন খেলা করছে। নির্বাচনের নামে তারা ত্রাস সৃষ্টি করেছে।

“একটা প্রমাণ আমি দিচ্ছি। ঢাকা-১৮ উত্তরাতে যে উপ নির্বাচন হচ্ছে সেই নির্বাচনে আমাদের দলের একজন নেতা মোস্তফা যিনি কমিশনার প্রার্থী হয়েছিলেন, গত রাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে আক্রমণ করে ভাংচুর করেছে। গতকাল সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী রেজা সাহেবকে (সেলিম রেজা) সারাদিন ঘরের মধ্যে আটক করে রাখা হয়েছিল।”

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই মানববন্ধন হয়।

সংগঠনের নেতা সাংবাদিক শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় মানববন্ধনে ছড়াকার আবু সালেহ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আবদুল করীম, শামীমুর রহমান শামীম, প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন, প্রকৌশলী ফখরুল আলম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের রফিকুল ইসলাম, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা বেগম, জাসাসের রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।