মন্টু, সাইয়িদসহ ৮ জনকে কামাল হোসেনের গণফোরাম থেকে বহিষ্কার

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মোস্তফা মহসিন মন্টু ও আবু সাইয়িদসহ আট জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর পর এবার তাদের বহিষ্কার করেছে গণফোরামের কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2020, 10:46 AM
Updated : 17 Oct 2020, 04:04 PM

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এই বহিষ্কারের পাশাপাশি ১২ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত বাকিরা হলেন- সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, হেলালউদ্দিন, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরী।

এদের মধ্যে শেষের চার জনকে আগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখন চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হলো।

গণফোরামের সদস্য মোশতাক আহমদ সভার সিদ্ধান্ত পড়ে শুনান।

এতে বলা হয়, বর্তমান রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বাস্তবতায় সংগঠনকে শক্তিশালী, গতিশীল  ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে আগামী ১২ ডিসেম্বর শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দলীয় শৃঙ্খলভঙ্গ ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগের বিষয়ে পাঠানো শোকজ নোটিসের জবাব না দেওয়ায়’ মন্টু, সাইয়িদ, সুব্রত ও জগলুলকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত সভায় উপস্থিত সদস্যরা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানালেও মহানগর গণফোরামের হারুন তালুকদার দাঁড়িয়ে বলেন, “আমি এসব সিদ্ধান্ত সমর্থন করি না।”

পরে সভার সভাপতি সাংসদ মোকাব্বির খান বলেন, “একজন সমর্থন করেনি। বাকিরা হাততালি দিয়ে এসব সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। এসব সিদ্ধান্ত পাস হল।

“সভায় যেসব বক্তব্য এসেছে তাতে যে স্পিরিট উঠে এসেছে সেটা হলো- যারা দলীয় শৃঙ্খলা মানেন না, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত মানেন না, যারা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথা শুনেন না। এই অবস্থায় একটি সংগঠন চলতে পারে না। প্রতিটি দলেই একটা ডিসিপ্লিন থাকে, তার একটা গঠনতন্ত্র থাকে, সকলকে সেই গঠনতন্ত্র মেনে চলতে হয়। আজ যেভাবে গণফোরামকে নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন, গণফোরামকে নিয়ে একটা খেলায় মেতে উঠেছে। সেটা মেনে নেওয়া যায় না।”

মোকাব্বির বলেন, “গণফোরাম কোনো এজেন্সির পারপাজ সার্ভ করার জন্য গঠিত হয়নি। গত ২৬ বছর দলের ভেতরে একটি গোষ্ঠি এই কাজটি করে আসছিল।”

সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, এক দলকে ছেড়ে আরেক দল করা বা অন্য দলে চলে যাওয়া এটা অনেক হয়েছে গণফোরামে। কিন্তু দলকে ছেড়ে দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করাটা এটা একটু অন্যরকম ব্যাপার।

“যারা এটা করছে ভাগ্য ভালো যে আমরা তাদেরকে চিনতে পেরেছি। চিনতে পারার সুযোগটা তারাই সেই সুযোগটা আমাদেরকে দিয়েছে। তারা যে কি প্রকৃতির মানুষ, আমরা সবাই এখন আন্দাজ করতে পারছি, এটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।”

রেজা বলেন, “ওদেরকে নিয়ে আর আমরা কিছু আমি বলতে চাই না। দলের সভাপতির সাথে ওদের চিন্তা ধারার মিল ছিল না। যখন ওরা ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে কটূক্তি করেছে আমি মনে করি তাদের এই দলে স্থান থাকতে পারে না। ড. কামাল শুধু দলের শ্রদ্ধেয় মানুষ নয়, উনি দেশের বিবেক হিসেবে কাজ করছেন।”

দলকে নতুনভাব সকলের সাথে আলোচনা করে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করার দৃঢ় প্রত্যায় ব্যক্ত করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক।

গত বছরের ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে। সেই কাউন্সিলে কামাল হোসেন সভাপতি ও রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে গণফোরামের একদল নেতাকর্মীকে নিয়ে বর্ধিত সভায় ২৬ ডিসেম্বের গণফোরামের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন ওই সভার সভাপতি অবিভক্ত দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। এজন্য তার নেতৃত্বে ২১০ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।

ওই সভা থেকে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অবিভক্ত দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মহসিন রশিদ, আওম শফিক উল্লাহ ও মোশতাক আহমেদকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও অনুমোদন করা হয়।