ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত না হওয়ার নেপথ্যে ইসির প্রতি অনাস্থার কোনো বিষয় রয়েছে বলে মনে করেন না তিনি।
বুধবার নির্বাচন ভবনে ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনকে সামনে রেখে আইন শৃঙ্খলা সভার পর ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সিইসি নূরুল হুদা।
গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ভোটের হার কম দেখা যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত মার্চে অনুষ্ঠিত ঢাকা-১০ আসনে উপনির্বাচনে ভোটের হার ৬ শতাংশেরও নিচে ছিল।
অভিযোগবিদ্ধ বিভিন্ন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসির প্রতি অনাস্থা থেকে ভোটাররা ভোট দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে বলে অনেকে মনে করেন।
তবে সিইসি মনে করছেন, ভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোরই ‘সিরিয়াসনেস’ নেই।
তিনি বলেন, “কখনও কখনও তারা নির্বাচন থেকে চলে যায়। তারা সরে আসে। তখন প্রতিযোগিতা থাকে না। আগে থেকেই নির্বাচনের সিরিয়াসনেস দেখি না।
“নাম উল্লেখ করতে চাই না, কোনো কোনো নির্বাচনে দেখেছি, যারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাদের পোস্টার নেই, মিছিল নেই। ভোটাররা দেখে, কার অবস্থান বেশি। বড় নির্বাচনে যদি বড় দল প্রতিযোগিতায় মাঠে না থাকে, তাহলে তো তার লোকেরা ভোট দিতে যাবে না। সে কারণেও ভোটার অনেক কম হতে পারে। এরকম অনেক হিসাব আছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “কোনোক্রমেই ইসির প্রতি অনাস্থা হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
ঢাকার বাইরের কয়েকটি নির্বাচনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “যশোরে নির্বাচনে হয়েছে। সেখানে ৬১% লোক সেখানে ভোট দিয়েছে। করোনা ও ব্যাপাক বন্যার মধ্যেও (বগুড়া) ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।
“সম্প্রতি যে নির্বাচনগুলো হয়ে গেল, সেখানেও ৬১ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ক’দিন আগে বাগেরহাটে, গাইবান্ধায়ও ৬৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।
“সুতরাং ভোটার ভোটকেন্দ্রে যায় না-এ কথা তো আমি হিসাবেই পাই না।”
প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা থাকলে ভোটার উপস্থিতিও বাড়বে বলে মনে করেন নূরুল হুদা।
“মাঠে ব্যাপকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন যদি না হয়, তখন কিন্তু ভোটারদের অনীহা থাকে। এটাও কাজ করে। অনেক নির্বাচনই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে না আনফরচুনেটলি।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে হলেও ঢাকার দুই আসনে উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করেন সিইসি।
সাত মাস আগে ঢাকা-১০ আসনে উপনির্বাচনে মাত্র ১৫ হাজার ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। তবে তখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে মানুষ আশঙ্কিত ছিলেন বলে নূরুল হুদার মত।
“ঢাকা-১০ আসনের ভোটের একদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হল যে, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। এতে নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট হয়েছিল।
“আবার অনেক লোকে যারা ইভিএম চান না, ইভিএমের ব্যাপকভাবে বিরোধিতা করেছিলেন তখন।ফেইসবুক ও মোবাইলে তারা এই সমস্ত বার্তা দিয়েছিলেন। লোকজন তখন আতঙ্কিত ছিল।”
আগামী ১৭ অক্টোবর শনিবার ঢাকা-৫ আসনে এবং ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে।
বিএনপির অভিযোগ ‘আমলে নেওয়ার মতো নয়’
নূরুল হুদা বলেন, ঢাকার দুটি উপনির্বাচন নিয়ে ‘ছোটোখাটো’ অভিযোগ এলেও তাতে আমলে নেওয়ার মতো কোনো কিছু নেই।
বিএনপি প্রার্থীরা নানা বাধার মুখে পড়ার কথা ইসিকে জানিয়েছে। ভোটের দিন তাদের এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, “গতকালকেও আমাদের সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী এবং তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা নির্বাচন সম্পর্কে ছোটখাটো কিছু অভিযোগ করেছেন, কিন্তু ব্যাপকভাবে বা সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতা তারা পেয়ে যাচ্ছে। এ কথা তারা বলেছেন।”
পোলিং এজেন্টদের বিষয়ে তিনি বলেন, “যদি কোনো পোলিং এজেন্ট কেন্দ্রে আসে, তার নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
“কেন্দ্রে আসার সময়ও যদি কোনো প্রার্থী মনে করে যে, তার এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকে, তাহলেও তারা সাহায্য-সহযোগিতা করবে-এরকম কথা হয়েছে।”
সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সিইসি বলেন, “আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বলেছে, বড় চ্যালেঞ্জিং কিছু নেই বিশেষ করে ঢাকা-৫ উপনির্বাচনে।”