মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টন থেকে একটি ‘মশাল মিছিল’ বের করেন তারা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশ থেকে বক্তারা ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে আটক ও ‘নিপীড়নের’ সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যথায় আগামী ৪ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন তারা। এছাড়া আগামী সাত দিন দেশব্যাপী ‘ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।
সোমবার রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দেওয়ালে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আাঁকার সময় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি জহরলাল রায় এবং শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাদাত মাহমুদকে আটক করে রমনা থানা পুলিশ। পরে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের অভিযোগ, এ সময় পুলিশি নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছিলেন তাদের সহযোদ্ধারা।
তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমাদের ঢাকা মহানগরের সহযোদ্ধারা যখন ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমানে গ্রাফিতি আঁকতে গিয়েছিলেন, সেখানে পলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেছে। এতে এটা স্পষ্ট, ধর্ষণের সঙ্গে ক্ষমতার কাঠামোর সম্পর্ক আছে। ক্ষমতার সাথে যারা জড়িত, তারাই বার বার এই সাহস দেখায়।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি জহরলাল রায় বলেন, “আমার যখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে গ্রাফিতি এঁকে শৈল্পিক প্রতিবাদ জানাতে যাই তখন রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা আমাদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। আমরা দেখছি রাষ্ট্র এখন ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষক। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর প্রশাসন খড়গহস্ত। আমরা ধর্ষক ও ধর্ষকের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ বলেন, “বিগত এক মাসে সারা দেশে ৩৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ধর্ষণের সাথে জড়িতদের কয়জনের বিচার হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। আমরা দেখছি, কুমিল্লার তনু হত্যা থেকে শুরু করে আদিবাসী নারী ধর্ষণের কোনো বিচার হয়নি। আাজকে সারা দেশে ক্ষমতার বিকৃত চর্চা শুরু হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনছে।”
সিপিবির প্রতিবাদ
ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে আটক ও ‘হয়রানি’র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম।
তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “গণবিরোধী সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। বর্তমানে সারা দেশে ধর্ষণ-নিপীড়ন অনেক বেড়ে গেছে। সরকার ধর্ষক-নিপীড়কদের পাহারাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সরকার কোনো ধরনের প্রতিবাদই সহ্য করতে পারছে না। দেয়ালের গ্রাফিতিকেও ভয় পেতে শুরু করেছে সরকার।
“ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকতে গিয়ে এখন ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের গ্রেপ্তার হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোনো ধরনের আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে পুলিশ থানার মধ্যেই চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। আন্দোলনের কর্মীদের ওপর থানার মধ্যে নির্যাতন করার স্পর্ধা পুলিশ পায় কোথায়?”
ধর্ষণ-নিপীড়ন বিরোধী চলমান আন্দোলনকে তীব্র করার পাশাপাশি ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের’ বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।