পাটকল: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা বাম জোটের

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে আগামী ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2020, 09:00 AM
Updated : 27 Sept 2020, 05:01 PM

রোববার সকালে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ।

রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বাম জোটের নেতাকর্মীরা পাট মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে জিরো পয়েন্টে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

তার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। পিপিপি বা লিজ নয়, আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রীয় পাটকল চালু করতে হবে।

“পাশাপাশি দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করে সরকারি-বেসরকারি সকল কারখানায় জাতীয় নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ, পাটখাত ধ্বংস ও দুর্নীতি লুটপাটে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিৎ করতে হবে।”

ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারীর চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় তার আগেই।

সে সময় বলা হয়েছিল আপাতত বন্ধ রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় আধুনিকায়ন করে ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে চালু করা হবে। অবসরে পাঠানো শ্রমিকদেরও তখন আবার কাজের সুযোগ হবে।

তবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা পিপিপিতে আগ্রহী নন, তারা লিজ নিয়ে পাটকল চালাতে আগ্রহী; সরকারও এখন ‘সেভাবে’ চিন্তাভাবনা করছে।

সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “আমাদের দাবি না মানলে আগামী ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করবে বাম জোট।”

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ডিসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে বলে জানান তিনি।

সমাবেশে বাম জোটের নেতারা অভিযোগ করেন, সরকার দেশের অর্থনীতিকে ‘পঙ্গু করে’ দিতেই বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল –আইএমএফের ‘পরামর্শে’ পাটকলগুলো বন্ধ করেছে ।

ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার বলেন, “আজকে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, তখন ভালো মানের পাট উৎপাদন করে বাংলাদেশের পাট শিল্প কিন্তু উন্নতির মুখ দেখতে পারত। কিন্তু তা না করে তারা সাম্রাজ্যবাদী আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে পাটকল বন্ধ করে দিল। এভাবে তারা আমাদের অর্থনীতিতে পঙ্গু করে দিতে চায়। “

দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “আওয়ামী লীগ আজ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। আওয়ামী লীগ আজকে কথায় কথায় বিএনপির আমলের হাওয়া ভবনের কথা বলে। এখন শুধু হাওয়া ভবন নয়, এখন সারা দেশে সবখানে সরকারিভাবে দুর্নীতি হচ্ছে।”

পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সমাবেশ নিয়ে বাম জোটের নেতা-কর্মীরা সচিবালয় ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ তাদের জিরো পয়েন্টের সামনে আটকে দেয়।

সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী বলেন, “দেশের ২৫টি সরকারি পাটকলে ৬০ হাজার শ্রমিক চাকরি করছিল, এর ওপর তাদের জীবিকা নির্ভর করছিল। আমাদের ৪০ লক্ষ পাটচাষীর ভবিষ্যৎ কী হবে, এদের নিয়ে সরকার চিন্তা করে না।

“আজকে ২৮৫টি ব্যক্তি মালিকানার হাতে পাটকল আছে। তারা যদি লাভ করে, সরকারি পাটকল কেন লোকসান করে? আমরা হিসাব করে দেখিয়েছি, মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদন করে লাভ করা যায় না। আমরা বলেছি , ঠিক সময়ে পাট কেনা না হলে লোকসান হবেই। এ সরকার সমস্ত উদ্যোগ নেয়নি। যথাসময়ে পাট কেনেনি, পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন করেনি।”

পাটকল পরিচালনায় বিজেএমসির ‘ব্যর্থতার’ কথা তুলে ধরে মানস বলেন, “ওই বিজেএমসিতে যারা বসে আছে, তারা আপদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত। সরকারি আমলারা বেসরকারি মালিকদের হাতে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে দুর্নীতির একটা স্বর্গ বানিয়েছেন দেশকে। দেশ থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পাচার করছেন। আমাদের সমস্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জনগণের সম্পদ দেশি বিদেশি কোম্পানিগুলোর হাতে আজকে তুলে দিচ্ছেন।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “মুষ্টিমেয় মুনাফাখোর, সিন্ডিকেট সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য, কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে যাদের যোগসাজশ, যারা রাষ্ট্রক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের সম্পদ দখল করে, তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আজকে পাটশিল্প বন্ধ করা হচ্ছে। 

“এই পাট মন্ত্রণালয়ে যে মন্ত্রী আছেন, তিনি কি দেশের স্বার্থ রক্ষা করেন, নাকি অন্য কোনো দেশের স্বার্থ রক্ষা করেন?  এ সরকারের মন্ত্রিসভা এটা কি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে নাকি বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করে? ”

সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বাম জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশে অংশ নেন।