কামাল হোসেনের ‘স্মৃতি বিভ্রাট’ হচ্ছে, দাবি মন্টুর

অশীতিপর কামাল হোসেনের ‘স্মৃতি বিভ্রাট’ ঘটছে বলে মনে করছেন গণফোরামের নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2020, 11:16 AM
Updated : 26 Sept 2020, 04:09 PM

ভাঙনের উপক্রম দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মন্টু শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাদের ডাকা বর্ধিত সভার পর সংবাদ সম্মেলনে তার এই ধারণার কথা জানান।

তিনি বলেন, “আমরা উনাকে (কামাল হোসেন) বারে বারে বলেছি, সাক্ষাৎ করে বলেছি কেন্দ্রীয় কমিটি মিটিং ডেকে সম্মেলনের তারিখটা নির্ধারণ করেন। আমরা চিঠি দিয়েও বলেছি। আমরা কয়েকদিন আগে যে গিয়েছলাম, উনি বলেছেন যে, ‘বসেন’। তারপরে বলেন যে, ‘না এরকম কোনো কথা আমি বলিনি’।

“আমরা যেটা মনে হয়, হয়ত উনি কিছু জিনিস ভুলে যান। আমার মনে হয়, একটু স্মৃতি বিভ্রাট ঘটছে আর কী।”

“তাছাড়া ওদের একটা অশুভ প্রভাব আছে, যে প্রভাবে উনি অনেক কিছু গুলিয়ে ফেলেন,” বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসা কামাল হোসেনের দল গণফোরামে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসা মন্টু।

সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক মারা যাওয়ার পর মন্টুই গণফোরামের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে এসেছিলেন। গত বছর কাউন্সিলে সেই পদ হারান তিনি।

মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে গণফোরামে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। রেজা কিবরিয়ার বিপক্ষে দাঁড়ান মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদসহ বেশ কয়েকজন।

এক পর্যায়ে রেজা কিবরিয়া চারজনকে বহিষ্কার করেন। সুব্রত চৌধুরীরাও পাল্টা বহিষ্কার করেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াসহ চারজনকে।

পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যে গত ৪ মার্চ গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। তিনি নিজে আহ্বায়ক হয়ে সাধারণ সম্পাদক করেন রেজা কিবরিয়াকে।

তবে তাতে না দমে শনিবার বর্ধিত সভা ডেকে কাউন্সিল আহ্বান করেছেন মন্টুরা; সভায় তারা রেজা কিবরিয়ার বহিষ্কারাদেশে অনুমোদনও করিয়ে নেন।

এই সভার এখতিয়ার নিয়ে বেজ কিবরিয়া প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে দলটির ভাঙন স্পষ্ট হয়েছে।

তবে মন্টু আশা প্রকাশ করে বলেন, “এখন আমরা আশা করি, সংগঠন এক থাকবে।”

গণফোরামের এক অনুষ্ঠানে কামাল হোসেনের বাঁ পাশে সুব্রত চৌধুরী ও ডানে মোস্তফা মহসিন মন্টু (ফাইল ছবি)

বর্ধিত সভার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সভাপতি কামাল হোসেন একমত হবেন কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা বারে বারে বলেছি, দলীয় স্বার্থে আমাদের পুরনো যত নেতা-কর্মী আছে, সবাইকে নিয়ে বসে সমস্ত সমস্যার সমাধান করে আপনি একসাথে এগিয়ে যান। বারে বারে উনি উদ্যোগ নেন, বলেন- ‘হ্যাঁ, বসব’। তারিখও দেন।

“এরপরে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখি কিছু ব্যক্তির অদৃশ্য হস্তক্ষেপে উনি হয়ত ভুলে যান, না হয় বলতে পারেন না। ১৮ মাস ধরে এই অবস্থা। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে আমি যখন সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সম্পূর্ণভাবে অগঠনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এসমস্ত চলে আসছে এবং যারা দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া, কাজ করেছে। নবাগতরা এসে তাদেরকে বহিষ্কার করে দিচ্ছে।”

আপনাদের সঙ্গে কি কামাল হোসেন আছেন- এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মন্টু বলেন, “আমরা অবশ্যই মনে করি যে, উনি আছেন।

“উনাকে এই সভা থেকে আহবান জানাচ্ছি, আপনি যেসব লোক বিতর্কিত তাদের পরিহার করুন এবং মাটির সাথে যাদের সম্পর্ক আছে, রাজনীতি করছে তাদের সাথে নিয়ে আপনি এগিয়ে যান, সংগঠনের গতি বাড়বে এবং মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারব।”

কামাল হোসেনের সাড়া না পেলে কাউন্সিলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান মন্টু।

“কাউন্সিলে তাদের মতামত সাপেক্ষে উনার (কামাল হোসেন) ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

আগামী ২৬ ডিসেম্বর সম্মেলন ডেকে তার প্রস্তুতি পরিষদও গঠন করেছেন মন্টুরা।

কামাল হোসেন বলেছেন, মন্টুদের ডাকা এই সভার সঙ্গে গণফোরামের সম্পর্ক নেই।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবারের বর্ধিত সভার পর সংবাদ সম্মেলেন মোস্তফা মহসিন মন্টু ও আবু সাইয়িদসহ গণফোরামের একাংশের নেতারা।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আবু সাইয়িদ বলেন, “গঠনতন্ত্রের ১৪ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্টভাবে আছে যে, জাতীয় কাউন্সিলন একবার হয়ে যাওয়ার পরে অন্তর্বর্তী সময়ে আরেক কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটি দলের সর্বোচ্চ সংস্থা। সেই কেন্দ্রীয় কমিটি মিটিংই হয়নি এতদিন।

“এই কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। কোনো ব্যক্তির না, আমরা যারা পদবী হোল্ড করি আমাদের না, এই কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিত সভা, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের দলের ভেতরে যারা কুচক্রী আছে তাদের সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যারা বিদেশমুখী এবং যুদ্ধাপরাধ, স্বাধীনতা বিরোধী- এদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত আছে, তাদেরকে গণফোরামে রাখা হবে না।”

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে রয়েছে গণফোরাম। তবে গণফোরামের এই অংশ ওই জোটে না থাকার বিষয়ে দ্বিধান্বিত।

জোটের বিষয়ে মন্টু বলেন, “সেসময়ে আমাদের দলের অনেক নেতৃবৃন্দ তাদের একটা প্রচণ্ড রিজারভেশন ছিল এভাবে ঐক্য না হওয়া। আমাদের সভাপতিসহ এমন একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তারা এত ঘন ঘন আসা শুরু করলেন যে পরিবেশটা ওই ধরনের ছিল না তখন।

“আমি সভাপতিকে নিজেও বলেছিলাম আমি নির্বাচন করবো না। তারপরেও যেহেতু আমি পার্টির সেক্রেটারি উনার নির্দেশ আমাকে পালন করতে হয়েছে। আমরা কিন্তু জামায়াতের সাথে ঐক্য করব না বলে দিয়েছিলাম, ঐক্য ফ্রন্টে জামায়াত ছিল না। নির্বাচনে কী পরিস্থিতি হয়েছে সেটা আপনারা জানেন, যে নির্বাচন পরের দিন হওয়ার কথা সেটা রাত্রে হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “আমরা অতীতের ভুলভ্রান্তি, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক সংগঠন, প্রত্যেকটা ব্যক্তির সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে জাতীয় স্বার্থে একটা ঐক্য হওয়ার প্রয়োজন আছে।

“এই সভার মাধ্যমে সবার কাছে আহ্বান জানাব, আসুন সবাই মিলে দেশটাকে রক্ষা করি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে একতাবদ্ধ হতে হবে, এর বিকল্প নাই।”

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গ আছেন কি না- জানতে চাইলে মন্টু বলেন, “সেই ঐক্য এখনও ভাঙা হয়নি। আমরা জাতীয় সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেব, সেই ঐক্যের ব্যাপারে কী করব।”