সরকার ‘নৈতিক অবস্থান হারিয়েছে’: জাফরুল্লাহ

সমাজের নানা স্তরে দুর্নীতির বিস্তারে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘিত’ হওয়ায় সরকার তার ‘নৈতিক অবস্থান’ হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2020, 11:40 AM
Updated : 24 Sept 2020, 11:40 AM

তিনি বলেন, “আজকে দুর্নীতি কোথায় পৌঁছেছে, সবচেয়ে বড় দুর্নীতি সরকার স্বয়ং। এখানে মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হরণ করে, এখানে মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ,তার চেয়ে বড় দুর্নীতি কী হতে পারে? মালেকের দুই তলা, সাত তলা দুইটা বাড়ি, আফজলের দশটা বাড়ি, বা দশ কোটি থেকে অনেক বেশি দুর্নীতি আমি মনে করি সরকারের। সরকার তার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছে।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ অন্যান্যদের ‘গ্রেপ্তার-নিপীড়ন- হয়রানি; ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরসহ সারা দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নামে মামলা ও সমসাময়িক বিষয়ে’ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জাফরুল্লাহ।

তিনি বলেন, “সরকারের অন্যায় আচরণ দেশকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আজকে সরকারকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই, এখনও সময় আছে, সংশোধন প্রয়োজন।”

ধর্ষণের দুই মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে আসামি করার প্রসঙ্গ টেনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “আজকে আমি খুব বেশি মর্মবেদনায় আছি। আজকে ভিপি নুর … সে যদি অন্যায় করে থাকে, সেটার বিচার হবে। তা বলে তাকে হয়রানি করা যাবে না।

“ছাত্র রাজনীতি একটা প্রসেশন করে, তাদের বের হতে দেবেন না, সেটা তো হয় না। আপনারা জনগণকে বের হতে দিচ্ছেন না। সেজন্য দেশটা নৈরাজ্যের দিকে চলছে।”

ধর্ষণের অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী রোববার রাতে লালবাগ থানায় নূরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার প্রধান আসামি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হাসান আল মামুন, যিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। নুর এই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।

মামলা হওয়ার পর সোমবার রাতে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে নুর ও তার ৭ জন সহযোগীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।   ‍

এর সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “যখন দেশে অনাচার বেড়ে যায়, ব্যথায় মানুষ নীল হয়ে যায়, তখনই ছাত্রসমাজ জাগে, ছাত্রসমাজ সচেতন করে। যখন চূড়ান্ত রকম অব্যবস্থাপনা তখনই ছাত্রসমাজ রাস্তায় নামে। সেদিনও যারা রাস্তায় নেমেছে, তারা কি গাড়ি ভেঙ্গেছে? কাউকে মেরেছে? পুলিশ লাঠি দিয়ে ... ।

“এ জাতীয় স্বৈরাচারী নীতি কখনও দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব বন্ধ করেন, এটা আপনার স্বার্থে। আজকে প্রয়োজন ন্যায়-নীতি, সুষ্ঠু সুশাসন; সুশাসন না হলে হবে না।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘অগণতান্ত্রিক, অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বিনা বিচারে হত্যার শামিল। আজকে রাজনীতিবিদদের সহনশীল হতে হবে। ক্রিটিসিজম সহ্য করতে হবে।

“আজকে এখানে মনে রাখা দরকার, দুর্নীতির কোন পর্যায়ে আছি আমরা। সরকার তো নিজেই  দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা নিজে অন্ধ হয়ে গেছে। তারা ভুলভ্রান্তি দেখতে পাচ্ছেন না। ফলে সবার কণ্ঠরোধ করেছেন।”

পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় ভারতের সমালোচনা করার পাশাপাশি এ বিষয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানের সমালোচনা করেন জাফরুল্লাহ।

“ভারত হঠাৎ অনৈতিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেন। পচা পেঁয়াজ পাঠান। এ জাতীয় খেলা নিয়ে আমরা তো কখনও সাহস করে বলতে পারি না। ভারতের সঙ্গে কীসের বন্ধুত্ব? যে বন্ধু আমার স্বার্থ দেখে না, একতরফা তার সাথে বন্ধুত্ব হতে পারে না। শোষকের সাথে শাসিতের বন্ধুত্ব হয় না।”

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু এ সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন।