লেটস টক: সঙ্কট মোচনে যা যা পরামর্শ তরুণদের

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে আর্থ-সামাজিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে নীতিনির্ধারকদের সামনে নানা উদ্ভাবনী ধারণা উপস্থাপন করছেন তরুণরা; পথ বাতলে দিচ্ছেন সঙ্কট উত্তরণের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2020, 09:27 AM
Updated : 23 Sept 2020, 10:04 AM

মহামারীর এই সময়ে তরুণদের এসব সৃজনশীল ভাবনা নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআইয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়ংবাংলার আয়োজন ‘লেটস টক’ এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি হয়ে গেল তিন দিনের বিশেষ ওয়েবিনার।

সিআরআই বলছে, আগামী দিনের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আজকের নীতিনির্ধারকদের ব্যবধান ঘুচিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ভাবনা বিনিময়ের সুযোগ করে দেওয়াই ছিল তাদের এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।

গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিনের এই ‘লেটস টকের’ সাতটি পর্বের মধ্যে দুটি সেশনে তরুণদের মুখোমুখি হয়েছিলেন সিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।

এছাড়া কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান,যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন পার্বে।

এসব সেশনে আইনপ্রণেতা, নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনায় সঙ্কট উত্তরণে নিজেদের ধারণা ও পরামর্শগুলো তুলে ধরেন তরুণরা।

নীতিনির্ধারকরা তাদের আশ্বস্ত করেন, তরুণদের কাছ থেকে আসা এসব পরামর্শ বিবেচনায় নিয়েই তারা আগামী দিনের পরিকল্পনা সাজাবেন।

করোনাভাইরাসের অভিঘাতে বিশ্বের অন্য সব দেশের মত বাংলাদেশকেও যে আর্থ-সামাজিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেখান থেকে আবার অগ্রগতির ধারায় ফিরতে তরুণদের সহযোগিতার প্রত্যাশা করেছেন তারা।

করোনাভাইরাস মহামারীতে ঘরবন্দি তরুণরা যখন হাঁপিয়ে উঠেছেন, তখন তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আবার সক্রিয় করার সুপারিশ এসেছে লেটস টকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘কালচারাল কাউন্সিল গঠন করে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে একটি পর্বে।

পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ, কপিরাইট ও রয়্যালিটি প্রশ্নে সচেতনতা তৈরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন তরুণরা।

কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সামাজিক নানা খাতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে জাতীয় যুব নীতির আধুনিকায়ন করে আগামী দুই বছরের এজেন্ডা সুনির্দিষ্ট করে রাখার প্রস্তাব আসে একটি পর্বে।

তরুণদের নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাজেট বরাদ্দেরও দাবি এসেছে ‘লেটস টক’ থেকে। তরুণরা বলছেন, সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবী তরুণ ও তাদের সংগঠনগুলোর একটি তালিকাও জাতীয়ভাবে থাকা দরকার।

প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অধীনে ন্যাশনাল ইয়ুথ কাউন্সিলকে আরও বিস্তৃত করে ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ সেল’ গঠন করার প্রস্তাব এসেছে তরুণদের আলোচনায়। সোশ্যাল সেইফটি নেট ও ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রামের মত স্থানীয় সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

তরুণ প্রতিনিধিরা বলেছেন, চাকরির বাজার যেমন দক্ষতা চাইছে, তা তাদের দক্ষতার সঙ্গে মিলছে না। দক্ষতার অভাব পূরণ করতে কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা দরকার।

ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অধীনে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কারিকুলামের আধুনিকায়নের সুপারিশ এসছে ওয়েবিনার থেকে। ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাফর্মের আধুনিকায়ন করতে প্রয়োজনীয় কারিগরি উপকরণ বিতরণেরও অনুরোধ এসেছে।

দূর শিক্ষণ কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের ফ্রি ইন্টারনেট দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে তরুণদের পক্ষ থেকে।

এছাড়া প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার কাউন্সিল পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে; যিনি শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের, দক্ষতা উন্নয়নের পথ বাতলে দেবেন।

‘লেটস টক’ এর শেষ পর্বে যুক্ত হয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণদের সুযোগ করে দিতে হবে।

“আমরা যদি চাই, আমাদের দেশ উন্নতি করবে, তাহলে আমাদের ইয়ুথদের এ সুযোগুলো তৈরি করে দেওয়া আমাদের সবার জন্য দায়িত্ব।”

দেশের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তরুণদের সেতুবন্ধন গড়ে দিতে ২০১৪ সাল থেকে ইয়াং বাংলা ‘লেটস টক’ শিরোনামে এ আয়োজন করে আসছে। ২০১৮ সালের ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন নিজের ভাবনা তরুণদের সাথে ভাগাভাগি করতে।

লেটস টকে এর আগে বেশ কয়েকটি পর্বে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।