খালেদার বিদেশে না যাওয়ার শর্ত ‘শিথিলের’ দাবি বিএনপির

অসুস্থ খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ‘দেশে থেকে’ চিকিৎসা নেওয়ার যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা শিথিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 01:21 PM
Updated : 21 Sept 2020, 01:21 PM

সোমবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে এই দাবির বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য এই নিষেধাজ্ঞাটা শিথিল করা হোক। একান্তই প্রয়োজন হলে, উনি যদি মনে করেন, তার চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া দরকার, উনি যাতে যেতে পারেন।”

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।

এরপর থেকে গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৫ বছর বয়সী খালেদা। বহু বছর ধরেই তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির সদস্যদের নিয়ে রোববার জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হতে আরও কিছুদিন বাকি থাকলেও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার গত ২৭ আগস্ট মেয়াদ বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সরকার ইতোমধ্যে খালেদার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে।

তবে আগের মত এবারও দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

নজরুল বলেন, যেহেতু আগেও তাদের নেত্রী বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, সে কারণে তার সাজা স্থগিতের আবেদনের সময় ‘প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার’ সুযোগ দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি।

“খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়টা শুধু মানবিকই না, এটা নৈতিক এবং জনগণের দাবি। কেউ একজন অসুস্থ হলে তার প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা হওয়া দরকার।”

বিএনপি নেতাদের ‘অতিকথনের কারণে’ খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে নেওয়ার দাবি উঠতে পারে’- তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এরকম বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এদেশের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিতসায় অকালে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করার অধিকার কারো নাই, উচিতও না।

“সেজন্য আমরা তথ্যমন্ত্রী সাহেবকে বলব, খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা তার কারাবন্দিত্বের সঙ্গে অন্য কিছুকে যুক্ত করা ঠিক হবে না। আর এটা অসুস্থতার বিষয়, চিকিৎসার বিষয়, রাজনীতির বিষয় নয়। কাজেই আমাদের রাজনীতির সঙ্গে তার সুচিকিৎসার বিষয়টাকে সম্পৃক্ত করাটা এক ধরনের অপরাজনীতি।”

বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের পাশাপাশি সাবেক অর্থমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা বলি, উনারা হলেন জিয়া পরিবারের সমালোচনা বিষয়ক মন্ত্রী। কারণ তারা তাদের বিভাগের বিষয়ে যতটুকু কথা বলেন, তার চেয়ে বেশি কথা বলেন তারা জিয়ার বিপক্ষে, খালেদা জিয়ার বিপক্ষে এবং তারেক রহমানের বিপেক্ষ। মনে হয় যেন এটাই তাদের মন্ত্রণালয়ের কাজ।”

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নজরুল ইসলাম খান এদিন জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে তারা মোনাজাতেও অংশ নেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, ইয়াসীন আলীসহ নতুন কমিটির নেতারা এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।