স্বাধীনতাকালীন নীতি-আদর্শে ফিরে গেছে বাংলাদেশ: রাদওয়ান

বাংলাদেশের গত এক দশকের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতাকালীন নীতি-আদর্শে ফিরে গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2020, 04:34 PM
Updated : 20 Sept 2020, 05:38 PM

ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন ‘হোয়াইটবোর্ড’-এর প্রথম সংখ্যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ উপলক্ষে রোববার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

রাদওয়ান মুজিব ‘হোয়াইটবোর্ড’-এর প্রধান সম্পাদক।

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পথ চলার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংবিধানে নেওয়া গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে এক নতুন উচ্চতায়। তবে এখানেই থেমে থাকা যাবে না।

বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন উল্লেখ করে রাদওয়ান বলেন, “গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ফিরে গেছে প্রতিষ্ঠাকালীন নীতি ও আদর্শে।”

‘উন্নয়নের পথে কাউকে পেছনে ফেলে রাখবো না’- বঙ্গবন্ধুর এই নীতিই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাস্তবায়ন করে চলেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করতে ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন ‘হোয়াইটবোর্ড’ নীতি নির্ধারকদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ, স্বচ্ছ ও ভারসামপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেবে বলে জানান রাদওয়ান।

এ কাজে সারা দুনিয়াতে নীতি-নির্ধারকদের সহায়তায় যেসব বাংলাদেশি মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, তাদের জ্ঞানও কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাদওয়ান বলেন, “হোয়াইটবোর্ডে সবসময়ই নীতি-নির্ধারকদের প্রতি বস্তুনিষ্ঠ, স্বচ্ছ ও ভারসাম্যপূর্ণ বার্তা থাকবে। দায়বদ্ধতা থাকবে এটা করার জন্য।

“তরুণ প্রজন্মকে একটা বিষয় বোঝার জন্য যে, নীতি-নির্ধারকদের কাছে তো সবসময় সব প্রশ্নের উত্তর থাকে না। অনেক সময় উনাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আসে। যেমন প্যানডেমিক, পৃথিবীর বড় বড় দেশ বলি আর ছোট দেশ বলি সবাই তো এই কোভিড নিয়ে একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে যে, এটা কীভাবে আমরা হ্যান্ডেল করব?

“আমাদের ওই জায়গাতেও একটু বুঝতে হবে যে, আমরা নীতি-নির্ধারকদের সহায়তা (আ্যাসিট্যান্স) দিতে পারি। উনাদের এখন অনেক দিকে চ্যালেঞ্জ আছে। ওই জায়গাতে যদি আমরা বিশেষায়িত জ্ঞান নিয়ে এসে একদম স্পষ্ট, ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে যদি নীতি নির্ধারকদের কাছে দিতে পারি যে, বাংলাদেশে একটা সমস্যা আছে, এই জিনিসটা যদি আপনারা করেন আমরা বিশ্বাস করি সমাধান করা যাবে।”

মুক্তিযুদ্ধের পর ক্ষতবিক্ষত এক দেশকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে ক্রমাগত উত্তরণের পথে এগিয়ে নিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণয়ন করেছিলেন বিভিন্ন নীতি, সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য স্থির করেছিলেন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য।

উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পথে আগামীর নীতি নির্ধারকদের জন্য বঙ্গবন্ধুর সেসব নীতি-লক্ষ্য আর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাকে উদ্বোধনী সংখ্যাতে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে 'হোয়াইটবোর্ড'।

আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সিআরআই থেকে প্রকাশিত হয়েছে এ সাময়িকী, যে সংস্থাটির ট্রাস্টি হিসেবেও রয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

সিআরআইয়ের ভাষায়, এ সাময়িকী হবে ভবিষ্যতের নীতি-নির্ধারকদের জন্য 'বাতিঘর'।

রাদওয়ান মুজিব বলেন, “…ব্রাইটেস্ট মাইন্ড। শুধু বাংলাদেশেই না, বাংলাদেশিরা বাইরে গিয়েও অনেকে ভালো করছে, অনেক নাম করছে। উনারা যেন স্পেস পায়।

“বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কেউ নাসায় হয়ত একটা রোবট বানাচ্ছে, বা কোনও একটা দেশে একটা ভ্যাকসিন বের করেছে। এরকম তো অনেক উদাহরণ আছে। উনাদের যে ব্রেইন পাওয়ার এটাকে আমরা কীভাবে কাজে (লেবারাইজ) লাগাতে পারি। উনাদের কথাটা আমাদের এখানে নীতি-নির্ধারকদের কাছে কীভাবে তুলে ধরতে পারি।”

মুজিববর্ষের শুরুতে মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে এ সাময়িকী প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল সিআরআই। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে যায়।

রাদওয়ান বলেন, “জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে এ বছরই আমরা এই ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। আমরা তা করতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য দারুণ এক আনন্দের বিষয়।

“আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এমন একটা কিছু করব যা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ সরকারের নীতি ও চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল, তা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেবে। বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মীরা কোন নীতিতে, কোন আদর্শে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে চিত্রিত করেছেন, তাদের আদর্শকে কিভাবে ভবিষ্যতের রূপকল্পে প্রণয়ন করেছেন, আমরা এখানে সেসব কথা বলতে চেয়েছি।”

বাংলাদেশের সংবিধান, বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক নীতিমালা, বাকশাল গঠন ও নানা গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি নিয়ে ‘হোয়াইটবোর্ড’র প্রথম সংখ্যায় আলোকপাত করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে কী কী বিষয়ের উপর কাজ করা হবে তা নিয়ে ধারণা দেন, ম্যাগাজিনটির প্রধান সম্পাদক।

তিনি বলেন, “এখন মুজিববর্ষে একটা স্পেশাল ইস্যু বের করেছি। সামনে আমাদের আরও পরিকল্পনা আছে, আগামী ইস্যুতে কোভিড রেসপন্স নিয়ে আমরা লিখব। তারপর বাংলাদেশ-৫০ আমাদের একটা স্পেশাল ইস্যু।

“ওখানে আমরা দেখব আরেকটু দীর্ঘমেয়াদে- যে বাংলাদেশ কোথা থেকে কোন পর্যন্ত এসেছে। ভবিষ্যতে কোথায় যাব আমরা।”

‘হোয়াইটবোর্ড’র কো-এডিটর সৈয়দ মফিজ কামালের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও যুক্ত ছিলেন ম্যাগাজিনটির সম্পাদনা পরামর্শক কমিটির সদস্য সামিয়া হক।

প্রথম সংখ্যায় যা আছে

‘অ্যা স্টেপ টুওয়ার্ডস বাংলাদেশ অ্যাট ৫০’ শিরোনামে হোয়াইটবোর্ডের প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয় লিখেছেন প্রধান সম্পাদক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

গ্রাম থেকে উঠে আসা এক তরুণ কীভাবে বিশ্ব মানচিত্রে একটি জাতিরাষ্ট্রের জন্ম দিলেন, তা নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন কো এডিটর সৈয়দ মফিজ কামাল।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ‘বাংলাদেশ’স কনস্টিটিউশন অব ১৯৭২: অ্যান এক্সপজিশন অব মুজিব পলিটিক্যালস ফিলোসফি’ শিরোনামে নিবন্ধ লিখেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহানের যৌথ নিবন্ধ ‘মুজিব’স ইকোনমি পলিসিজ অ্যান্ড দেয়ার রিলেভেন্স টুডে’ –ঠাঁই পেয়েছে এই ম্যাগাজিনে।

বাংলাদেশের সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি। দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তা নিয়ে গবেষক-সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান লিখেছেন ‘জাস্ট লাইক টুডেজ প্রোগ্রেসিভ পলিটিকস, বাকশাল ওয়াজ সোশ্যাল-ডেমোক্রেটিক ইন নেচার’ নিবন্ধ।

বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে নানা অর্থনৈতিক পদক্ষেপের কথা উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক শামস রহমানের নিবন্ধ ‘ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট থ্রো পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি’তে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য অক্সফামের ত্রাণ কর্মসূচির সমন্বয়কারী জুলিয়ান ফ্রান্সিসের ‘হাউ মুজিব কো-ম্যানেজড ওয়ান অব দ্য লার্জেস্ট রিলিফ অপারেশনস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামের নিবন্ধে লিখেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ত্রাণ সহায়তায় জন্য বঙ্গবন্ধু কোন কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ‘ফ্রেন্ডশিপ টুওয়ার্ডস অল ওয়াজ অ্যা মাস্টারস্ট্রোক’ শিরোনামের নিবন্ধ লিখেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও গবেষক তাহসিন আলী।