বিএনপির ‘১ নম্বর জরুরি কাজ’ কী, জানালেন ফখরুল

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্ত করাই এখন ‘এক নম্বর জরুরি কাজ’ বলে দলের নেতা-কর্মীদের জানালেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2020, 02:12 PM
Updated : 15 Sept 2020, 02:15 PM

সাজার কার্যকারিতা স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে আরও ছয় মাস মুক্ত রাখতে সরকারের আদেশের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি একথা জানান।

ফখরুল বলেন, “আজকে আমার কাছে যা মনে হয়, বড় একটা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই যে গৃহঅন্তরীণ হয়ে থাকা। সে গণতন্ত্রের নেত্রী, দীর্ঘকাল তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাকে বের করে আনাটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এটা এক নাম্বার কাজ।”

দণ্ড নিয়ে বিদেশে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আসা বিএনপির ‘দুই নম্বর জরুরি কাজ’ বলে জানান দলটির মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

“দুই নাম্বার হচ্ছে, আমাদের যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি বিদেশে আছেন, তার বাংলাদেশে ফিরে আসা গণতন্ত্রের জন্যে বেশি প্রয়োজন। এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা সেগুলোকে দূর করা।”

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনআরসি) উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ফখরুল।

দেশে গণতন্ত্র ‘ফিরিয়ে আনার জন্য’ জাতীয় ঐক্য গড়ে গণআন্দোলন সৃষ্টি করা গেলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে বলে মনে করেন ফখরুল।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আজকে সারা পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ধবংস করে দিয়ে একটি গোষ্ঠির স্বার্থ চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

“আজকে বাংলাদেশে মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটের অধিকার হরণ, সংবাদপত্র-মত-ব্যক্তির স্বাধীনতা সব কিছু হরণ করা হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে জনগণ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না। এদেশে এখন আওয়ামী লীগ ও তার ‍সুবিধাভোগী শ্রেণির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই সরকারের গণতন্ত্রের সব কিছুকে হরণ করেছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণ ও সব গণতান্ত্রিক দলের ‘ইস্পাত কঠিন ঐক্য’ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “বেগম জিয়াকে মুক্ত করলে গণতন্ত্রের মুক্তি আসবে। কিন্তু সেই জন্য আমাদেরকে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, কী করে আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নামতে পারব। আন্দোলন ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা নিশ্চিত।”

আ স ম আবদুর রব

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “দেশে সমস্ত কিছু একজনের হাতে, একটা গোষ্ঠির হাতে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করার প্রয়োজনে গণবিস্ফোরণ ঘটাতে হবে।”

বিরোধী রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা ও অনৈক্যের কারণে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন রব।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “এখন বাংলাদেশে অনুবীক্ষণ কিংবা দুরবীক্ষণ, কোনটা দিয়েই গণতন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

“পরিকল্পনা এখন যা হয়, পরীর মতো উড়াল দিয়ে একদল লোক অর্থ সম্পদ নিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় পাড়ি দিচ্ছে আর জনগণ কল্পনার ধুলাবালিতে হামাগুঁড়ি খাচ্ছে। আমলাতন্ত্র কামলাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ আইনভঙ্গকারী বাহিনীর খেতাব লাভ করেছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐক্যমত হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

বিএনআরসির পরিচালক জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় এই সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও বক্তব্য রাখেন।