বুধবার বিকালে এই সংবাদ সম্মেলনে একাদশ সংসদকে ‘রাবার স্ট্যাম্প’ সংসদ আখ্যায়িত করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “পার্লামেন্টে কী চলছে? এই পার্লামেন্ট পুরোপুরিভাবে একটা রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়েছে এবং সরকারি দল তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য, তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে আড়াল করবার যে একটা পার্লামেন্ট খাড়া করে রেখেছে আসলে সেই পার্লামেন্টে কী হচ্ছে?
“আওয়ামী লীগ তাদের সেই পুরনো কায়দায় ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সালে তারা যেভাবে পার্লামেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল, ঠিক একই কায়দায় আজকেও তারা...। সংসদ সদস্যদের যেটুকু ন্যূনতম অধিকার আছে, সেই অধিকারটুকু তাদের দেওয়া হচ্ছে না।”
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “শুধু তাই নয়, তারা (সরকারি দল) প্রতারণা করছে জনগণের সঙ্গে। সংসদ সদস্যরা যে প্রশ্ন দিচ্ছেন সেই প্রশ্ন বদলে দেওয়া হচ্ছে। এটা চিন্তাও করা যায় না।
“যেখানে শপথ নেওয়া হয়েছে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধান মানে কী? জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের চুক্তি। সেই চুক্তিতে সেই সংবিধানে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া আছে, সংসদ সদস্যদের কী কী অধিকার আছে, সংসদ কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্যে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব কী? প্রধানমন্ত্রী কীভাবে তার সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করবেন…। সংসদের রুলস অব প্রসিডিউরের মধ্যে সব কিছু বলা আছে
“যেখানে যদি স্পিকার, পার্লামেন্টের সেক্রেটারিয়েট তারা যদি এই প্রতারণার সঙ্গে, এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয় তাহলে এটাকে কোনো ধরনের অপরাধ বলব? আমি তো পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই ধরনের সংবিধান লংঘন মানে হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ। অর্থাৎ পুরো জনগণকে প্রতারণা করা, সংবিধানকে লংঘন করা, সংবিধানকে এড়িয়ে যাওয়া এবং জনগণকে পুরোপুরিভাবে ধোঁকা দেওয়া। এ রকম একটা সংসদ এখন চলছে।”
‘বর্তমান সংসদে একটা বিরোধী দল শক্তিশালী থাকায়- এটা গণতন্ত্রের জন্য খুব প্রয়োজন’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা হাস্যকর। আমরা মনে করি যে, এই ধরনের কথা বলা মানে হল, জাতির সাথে তামাশা করা।
সংসদে প্রশ্নপত্র বদলে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, “আমরা যে প্রশ্নপত্র জমা দেই সেটা স্পিকার কর্তৃক গ্রহণের পর হুবহু মৌখিক প্রশ্ন তালিকায় আসতে হবে। কিন্তু আমি বিস্মিত হয়েছি, আমার প্রশ্নটি ৬৮ নং সেইভাবে আসেনি। মাননীয় মন্ত্রী যে উত্তর দিয়েছেন এর ধারে কাছেও যাননি। আজকেও আমার মৌখিক একটি প্রশ্নেরও আংশিক উত্তর এসেছে পুরোটা আসেনি।
“এ ব্যাপারে স্পিকার ও সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। মাননীয় মন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন তারা সঠিক তথ্য জাতিকে জানাবেন সংসদের মাধ্যমে। এটা সবচেয়ে বড় উদ্বেগের, আমার প্রশ্ন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।”
সাংসদ জি এম সিরাজ বলেন, “১২ বছর দুর্নীতি চলছে, লুট চলছে, ডাকাতি চলছে, ব্যাংক খালি করে ফেলেছে, অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে…। চারিদিকে শুধু লীগ আর লীগ। সেখানে এখন পর্যন্ত আমি বা আমার বন্ধুরা যে প্রশ্ন উত্থাপন করি সংসদে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদ থেকে বলেন সেই ১৪ বছর আগের কাহিনী শুরু করেন। ১৪ বছর আগে বিএনপি কী করেছিল, ১৪ বছরের সরকার কী করল সেটা তিনি দেখেন না।
“এখন দেশ যেভাবে চলছে এভাবে দেশ চলতে পারে না। গরিবের পয়সা, কৃষকের পয়সা, ট্যাক্সের পয়সা লুটপাট করে চলে যাচ্ছে। আমি আগামীকাল যদি দেখি পার্লামেন্ট ডিজ্যালবড হয়ে গেছে তাহলে আমি হব হ্যাপিয়েস্ট ম্যান। কেন? আমি চাই, মানুষ তার ভোটের অধিকার ফিরে পাক। এরা (ক্ষমতাসীনরা) মানুষের প্রতিনিধি নয়, এরা হাওয়ার প্রতিনিধি।”
“আমরা এমন একটা দেশে বাস করছি যেখানে ভোট জালিয়াতি হয়, ব্যাংক জালিয়াতি হয়, টাকাপাচারের জালিয়াতি হয়, শেয়ারবাজারের জালিয়াতি হয়, যেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে জালিয়াতি হয়, করোনা নিয়ে, মাস্ক নিয়ে জালিয়াতি হয়, স্বাস্থ্য খাতে জালিয়াতি হয় এমন কোনো খাত নেই যেখানে জালিয়াতি হয় না। এই জালিয়াতি এখন সংসদেও ঢুকে গেছে।”
সরকারি দলের সংসদ সদস্য ৮-১০টি প্রশ্ন জমা দিলে তাদের সব প্রশ্নই গ্রহণ করা হলেও তার জমা দেওয়া ৪০-৫০টি প্রশ্ন থেকে মাত্র ৬-১০টি প্রশ্ন আসে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাংসদ মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা সংসদে আমাদের অধিকার পাচ্ছি না। আমরা সংসদে কথা বলতে চাই, সেই সুযোগ আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের নোটিশ বাই পাস করা হয়।”
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে বিএনপির সাংসদ আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।