মসজিদে বিস্ফোরণ: বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্ত কমিটির দাবি বিএনপির

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ নিয়ে একেক সংস্থার একেক রকম বক্তব্য আসায় উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2020, 12:29 PM
Updated : 7 Sept 2020, 12:29 PM

সোমবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।

গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শুরুতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণের ধারণা করা হলেও এখন বলা হচ্ছে, গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে এ বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। আবার সেখানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থাকার কথাও বলা হয়েছে।

এই ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন আলাদাভাবে মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ফখরুল বলেন, “এটা শুধু বিদ্যুতের জন্য, গ্যাসের জন্য, এসির জন্য, না কি কোনো সাবোটাজ এখানে করা হয়েছে কি না বা নাশকতামূলক কাজ হয়েছে কি না, এ ব্যাপারে কিন্তু জাতি জানতে পারছে না।

“আমরা মনে করি যে, এই ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে অবিলম্বে তদন্ত কমিটি করা দরকার। এটার সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা দরকার এবং তাদের শাস্তির বিধান করার দরকার।”

বিভিন্ন তদন্ত কমিটির ভিন্ন রকম বক্তব্যে ‘রহস্যের’ সৃষ্টি হয়েছে বলে ম্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

“ফায়ার বিগ্রেড তারা প্রথম দিন এক রকম কথা বলেছে, পরে বিদ্যুত বিভাগের লোকেরা গিয়েছে তারা এক রকম কথা বলেছে, গ্যাসের লোকেরা গিয়ে তারা আরেক রকম কথা বলেছে।”

গ্যাস লাইনের উপর মসজিদ তৈরি নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা তো এই মুহূর্তে বিবেচ্য বিষয় নয়। এই মুহুর্তের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে যে, বিস্ফোরণ ঘটলো কীভাবে? এই বিস্ফোরণের প্রকৃতিটা কী, তার চরিত্রটা কী?”

আহতদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানান ফখরুল।

সিনহা হত্যা ‘বিগ রুটেড’

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতার ফল বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে যে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোনোভাবে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমরা যে রিপোর্ট পড়লাম গণমাধ্যমে, সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রায় ২০০ লোক কিলিং হয়েছে কক্সবাজারে, সেগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যা।

“মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহার হত্যার বিষয়টা অত্যন্ত বিগ রুটেড। এখানে অনেকগুলো বিষয় সামনে চলে এসেছে। একটা হচ্ছে, এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং। পুলিশকে এই অথরিটি কে দিয়েছে?”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি তুমুল আলোচনায় এলেও তা ঘটে চলেছে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে।

“অত্যন্ত বেশি ঘটেছে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ তে। সেগুলো সবই ছিল রাজনৈতিক। এসব কিন্তু সেভাবে সারফেসে আসেনি। আমরা অনেক কথা বলেছি, মানববন্ধন করেছি, ভিকটিম ফ্যামিলিগুলোকে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে, জাতির সামনে আসার চেষ্টা করেছি।

“আমাদের ভিকটিমরা জাতিসংঘের সদর দপ্তর জেনেভায় পর্যন্ত গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সরকার সবসময় এগুলোকে এড়িয়ে গেছে। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলো এমন একটা ক্ষমতাশালী, রাষ্ট্রের মধ্যে তারা একটা রাষ্ট্র। যার ফলে যারা পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট দাবি করে, তাদেরকে তারা তোয়াক্কা করে না এবং তারা তাদের মতো করে কাজ করতে থাকে।”

অভিযুক্তদের সম্পদের দিকটি দেখিয়ে ফখরুল বলেন, “পুলিশ অফিসার যারা অভিযুক্ত, তাদের যে সম্পদের বিবরণ আমরা পেলাম কোটি কোটি টাকার সম্পদ, বিভিন্ন জায়গায় সম্পদ। এ থেকে প্রমাণিত হয়, এই এজেন্সিরা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।”

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ফখরুল।

“এই বিষয়গুলো শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এজন্য যে, জাতিসংঘের সনদে এগুলো হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং এই অপরাধের সাথে যারা জড়িত যেমন সার্বিয়া, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে তাদের অনেকেরই কিন্তু বিচার হচ্ছে।”

ইউএনওর উপর হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলাকারী চুরির জন্য ঢুকেছিল বলে মানতে নারাজ বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “অল অন এ সাডেন র‌্যাব একটা প্রেস কনফারেন্স করে বলে দিল যে চুরির জন্য এই আক্রমণ করা হয়েছে।

“আমরা মনে করি যে, এটা দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক প্রতিচ্ছবি। দুটি দিক থেকে। একটা হচ্ছে ল’লেসনেস। বাড়িতে ঢুকে যে কাউকে মেরে দেওয়া যায়। আরেকটা হচ্ছে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলোকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই চট করে একটা সংবাদ সম্মেলন করে বলে দেয় যে, চুরির জন্য ঘটনা ঘটছে।”

ফখরুল বলেন, “আমরা পরে কী দেখতে পাচ্ছি? সরকারি জমি জোর করে দখল করছে অথবা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে সরকারি দলের লোকেরা, এই উপজেলা কর্মকর্তা তিনি বাধা দিয়েছেন, যে কারণে তার ওপরে এই আক্রমণ হয়েছে।

“সরকারি দলের লোকজনকে গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যেটা খুবই বিপজ্জনক। যে কারণে আমরা বলি যে এই ঘটনার নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তদন্ত হওয়া উচিৎ, যাতে করে সঠিক চিত্র বেরিয়ে আসে।”

‘কোভিড টেস্ট কমিয়ে দিয়েছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার নির্দেশ দিয়ে কোভিড টেস্টিং কমিয়ে দিয়েছে। আজকে সকালে আমি আমার এলাকা ঠাকুরগাঁয় ফোন করেছি। আমার এক কাজিন, আমাদের দলেরই সে একজন ইম্পর্টেন্ট লোক। তার কোভিড হয়েছিল, ১৪ দিন পার হয়ে গেছে। এখন টেস্ট করবে পজেটিভ আছে না নেগেটিভ আছে, কিন্তু এখন টেস্ট বন্ধ।

“স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোন জায়গায় চলে গেছে? আজকে লক্ষ্য করে দেখেন প্রতিদিনের ব্রিফিং বাদ দিয়েছে। কারণ আর কত মিথ্যা কথা বলবে। সংক্রামণ তথ্য লুকিয়ে লাভ কী? সরকারের ব্যর্থতার কারণে, তাদের উদাসীনতার কারণে কোভিড ছড়িয়ে গেছে। এই অবস্থা হলে সরকারের প্রয়োজনটা কী?”

স্থানীয় সরকারসহ উপ-নির্বাচনে যাবে বিএনপি

সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের আসন্ন নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

ফখরুল বলেন, “আমাদের বরাবরই সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। শুধু কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা গত দুটি উপনির্বাচনে (যশোর ও বগুড়া) যোগ দিয়েও পরবর্তীকালে আমরা প্রচারণায় যাইনি, আমরা সরে দাঁড়িয়েছি। আমরা উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করব, সেই সিদ্ধান্তই আছে।

“সে অনুযায়ী আমরা ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৫ ও সিরাজগঞ্জ-১ উপনির্বাচনে অংশ নেব। সে হিসেবে আগামী ১০ তারিখে নমিনেশন ফরম বিক্রি করা হবে। ১২ তারি্খে পার্লামেন্টারি বোর্ড সাক্ষাতকারের জন্য বসবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য।”