গুম-বিচার বহির্ভূত হত্যার আন্তর্জাতিক তদন্ত চাই: ফখরুল

বাংলাদেশে গুম-বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত চাইছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2020, 02:30 PM
Updated : 30 August 2020, 02:44 PM

আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে শনিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।

তিনি এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, “আজকে প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে এক লক্ষের উপরে মামলা, মারা গেছেন ২৬শ’র উপরে, আর ৬০৩ এর উপরে গুম হয়ে গেছে।

“এই সব তথ্য ডকুমেন্টেড, যারা রিপোর্ট করেছেন তাদের। আনডকুমেন্টেড অনেক আছে। এটা সম্পূর্ণ তথ্য নয়, অনেক তথ্য আছে যেটা আমাদের কাছে নেই।”

“আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আমরা এসব ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এজন্য তাদের বাংলাদেশে ‘গুম’ ও বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনাবলীর তদন্তে একটি জুডিশিয়াল ইনকুয়ারি কমিশন গঠন করা উচিৎ,” বলেন তিনি।

২০০৯ সাল থেকে ‘গুম’ হওয়ার ঘটনাসমূহ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে সংবাদ ব্রিফিং এবং এর খসড়া জাতিসংঘের কাছে পাঠানোর কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।

“কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কোনো অ্যাকশন এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি,” বলেন তিনি।

বর্তমান সরকারের অধীনে ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত হবে না দাবি করে ফখরুল বলেন, “যে সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, যে সরকার অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো ব্যবহার করে নির্বাচনের আগের রাতে ক্ষমতা দখল করে নেয়, জনগণের ওপর কোনো দায়িত্ববোধ থাকতে পারে না।”

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ না হলে অনেক ঘটনা আড়ালে থেকে যায় বলেও দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি সব খবর না তুলে আনার জন্য গণমাধ্যমের প্রতিও অনুযোগ জানান তিনি।

“যতক্ষণ পর্যন্ত না পত্র-পত্রিকাগুলো সামনে নিয়ে আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে না। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, মেজর সিনহা …  যখন তাকে নির্মমভাবে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অন দ্য স্পট গুলি করা হলো, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করা হল, তখনও অনেকেই কথা বলেছেন। তার আগে যে রাজনৈতিক কারণে শুধু নয়, কোনো কারণ নেই, তাদেরকে তু্লে নিয়ে গিয়ে যখন খুন করে ফেলা হয়েছে, তখন কিন্তু দুঃখজনকভাবে মিডিয়া সেভাবে সোচ্চার হয়নি।”

ফখরুল বলেন, “আমরা আজকে এক কঠিন সময় পার করছি। এই সময় আমাদেরকে রক্ষা করবার সময়, এই সময় আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার সময়. এই সময় আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবার সময়, আমাদের রক্তের বিনিময় স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার সময়।

“বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণভাবে একটি গণতন্ত্রহীন, ফ্যাসিবাদী একনায়কতান্ত্রিক একটা দেশে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো বিভেদ ভুলে দিয়ে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।”

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শাহিদুজ্জামানের এক বক্তব্য ধরে ফখরুল বলেন, “এই ঘটনাগুলোর সাথে বাইরের কোনো দেশ জড়িত কি না …. যে খবরগুলো এসছে সেই খবরগুলো যদি সত্য হয় যে, তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। এটা অত্যন্ত ভয়াবহ চিত্র।”

দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংগ্রাম ও ত্যাগের কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

“এদেশের মানুষ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে দেখে। এখনও হাজার হাজার মহিলা তার মুক্তির জন্যে, তার সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজা রাখে, দোয়া করে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ উঠে দাঁড়াবে, তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনবে, হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে, হারিয়ে যাওয়া অধিকারগুলোকে তারা ফিরিয়ে আনবে।”

ওয়েবিনারে বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নিপীড়ন-নির্যাতন সম্বলিত মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় এই আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান, ১৯৭৪ সালে ‘গুম’ হওয়া ন্যাপ নেতা আবু বকর জাফর উদ-দৌলা দিপুর বোন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস বেগম, ২০১৭ সালে ‘গুম’ হওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস, ২০১৩ সালে ‘গুম’ হওয়া ঢাকার ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম এবং লাকসাম পৌরসভার সভাপতি পারভেজ কবির হীরুর স্ত্রী শাহনাজ আখতার বক্তব্য রাখেন।

এই ওয়েবনিয়ারে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কুটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তাবিথ আউয়াল, জেবা আহমেদ, মীর হেলাল, ফারজানা শারমিন, জাহিদুল আলম হিটো, জুয়েল মন্ডল, ইয়াসীর খান চৌধুরী যুক্ত ছিলেন।