১৫ অগাস্টের পর নেতৃত্বে ‘ভীরুতা-আপসকামিতা’ দেখেছেন নানক

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘ভীরুতা ও আপসকামিতা’ দেখার কথা জানিয়েছেন দলটির বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 03:05 PM
Updated : 13 August 2020, 03:07 PM

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় একথা বলেন তিনি।

তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা নানক পঁচাত্তরের ঘটনা স্মরণ করে বলেন, “আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না, সেদিন কিন্তু নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিল কাপুরুষতা, ভীরুতা, দোদুল্যমানতা এবং আপসকামিতা। সেগুলো আমরা দেখেছি।”

স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেন একদল নেতা কর্মকর্তা।

ওই হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তৎকালীন বাকশাল তথা আওয়ামী লীগের নেতারা। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য খোন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকারেও যোগ দিয়েছিলেন।

কয়েক বছর পর বিদেশ থেকে দেশে ফিরে ভাঙনের মুখে থাকা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এখনও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

তখনকার মতো ষড়যন্ত্র এখনও চলছে বলে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে নানক বলেন, “আজকের প্রেক্ষাপটে সেই ভীরুতা, কাপুরুষতা, আপসকামিতার কোনো সুযোগ নেই।

“শত্রুকে শত্রু হিসাবেই চিহ্নিত করতে হবে, মিত্রকে মিত্র হিসাবেই চিহ্নিত করতে হবে। বিএনপি, জামাত ও আইএসআই শক্তি তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অত্যন্ত সচল ও সচেষ্ট আছে।”

বঙ্গবন্ধু যে একটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন, তা তুলে ধরে নানক বলেন, “স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ভারত জুজু দেখিয়ে একটি রাজনীতি শুরু হয়। এর নেপথ্যের নায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমান ষড়যন্ত্রটা পাকাপোক্ত করেন। এটা পাকিস্তান বানানোর একটি ষড়যন্ত্র।

“সেসময় মুক্তিযুদ্ধের শক্তির ভিতরেও ছিল একটি বিভেদ। জাতির পিতাকে হত্যায় সেটাকেও কাজে লাগানো হয়েছে।”

নানক বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার কলঙ্ক থেকে আমাদের মুক্ত করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় আসার পরেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন।

“কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করলেও তার পেছনের শক্তি কিন্তু এখনও একেবারে আড়ালেই রয়ে গেল। সেদিন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে সমগ্র হত্যাকাণ্ডের নীলনকশাটি বাস্তবায়ন করেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার যে দম্ভ করেছেন, সেগুলো মানুষের কাছে বারবার নিয়ে আসতে হবে। তাহলে মানুষ শত্রু ও মিত্রকে চিহ্নিত করতে পারবে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করে মার্কিন ও তাদের মিত্ররা। পক্ষান্তরে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের সহায়তা করেছে।

“আমাদের স্বাধীনতার মধ্যে দিয়ে একদিকে একাটি একটি দেশ হল, আরেকদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটা জয়-পরাজয় হল। যারা আমাদের পক্ষে ছিল তারা বিজয়ী হলেন, আর বিপক্ষের শক্তি পরাজিত হল। যার কারণে শুরু থেকে পাকিস্তান ও তাদের পশ্চিমা পরাশক্তি প্রভু আমাদের বিজয়কে মেনে নিতে পারেন নাই। তাই তাদের চক্রান্তই ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারকে কিভাবে উৎখাত করা যায়।”

বিদেশিদের সঙ্গে দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের কথা তুলে ধরে হানিফ বলেন, “বাংলাদেশের কিছু ষড়যন্ত্রকারী যদি আন্তর্জাতিক শক্তিকে সহায়তা না করত, তাহলে বাহিরের কোনো শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারত না। আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা সফল হয়েছিল আমাদের দেশের বেঈমান মীর জাফরদের মাধ্যমে।”

‘১৫ই অগাস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড : নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, সঞ্চালনা করেন বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

ভার্চুয়াল এই সভায় আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, সাংবাদিক আবেদ খান, ভাষাতাত্ত্বিক পবিত্র সরকার প্রমুখ।