কোভিড-১৯: সপ্তাহে দুদিন বুলেটিন চান কাদের

দেশে করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভিডিও বুলেটিন একেবারে বন্ধ না করে সপ্তাহে অন্তত দুদিন প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2020, 09:08 AM
Updated : 12 August 2020, 09:57 AM

বুধবার নিজের সরকারি বাসা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিআরটিএ ও বিআরটিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য বুলেটিন নিয়েও কথা বলেন তিনি।

কাদের বলেন, “করোনা সংক্রমণ, মৃত্যুসহ প্রতিদিন আপডেট নিয়ে স্বাস্থ্যবিভাগ যে বুলেটিন প্রকাশ করত, তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি এই বুলেটিন সপ্তাহে অন্তত দুই দিন প্রচারের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

“না হয় সংক্রমণ বিস্তারে জনমানুষের মাঝে শৈথিল্য দেখা দেওয়ার পাশাপাশি গুজবের ডালপালা বিস্তারের আশঙ্কা থাকে। তাই বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে স্বাস্থ্যবিভাগ বিবেচনায় নেবেন বলে আশা করছি।”

চীনে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানাতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন শুরু করে আইইডিসিআর।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা তখন সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিতেন। মাঝে-মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও সংবাদ সম্মেলনে আসতেন।

দেশে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পর গত মার্চে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আইইডিসিআরের পরিবর্তে সংবাদ সম্মেলন করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবন থেকে। সেব্রিনা ফ্লোরার পরিচালনায় ওই সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও তার বাসা থেকে যোগ দিতেন কখনও কখনও।

তখনও ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল গণমাধ্যমের কর্মীদের। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে সে সুযোগ বাদ দেওয়া হয়। তখন সংবাদ সম্মেলন হয়ে যায় সংবাদ বুলেটিন।

বুলেটিন চালুর পর অধিকাংশ দিনই সর্বশেষ তথ্য নিয়ে হাজির হচ্ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা। বুধবার থেকে সেই ভিডিও বুলেটিন প্রচার বন্ধ করে শুধু প্রেস রিলিজ দিয়ে সাংবাদিকদের তথ্য জানানো শুরু হওয়ার কথা।

এর কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরিস্থিতির ‘উন্নতি’ ঘটায় এখন আর বুলেটিন প্রচার করার প্রয়োজন দেখছেন না তারা।

“চার-পাঁচ মাস ধরে তো বুলেটিন হলই। এখন তো আল্লাহর রহমতে পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো। আমরা মনে করি এখন সংক্রমণ কমে আসছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। এ কারণে আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়মিত একজন ব্যক্তি দিয়ে বুলেটিন না করে প্রেস রিলিজ দেওয়া।”

মঙ্গলবার দুপুরে সর্বশেষ ভিডিও ভিডিও বুলেটিনে এসে একদিনে আরও ৩৩ জনের মৃত্যু এবং ২ হাজার ৯৯৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানান অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।

তাতে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫০৩ জন হয়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩ হাজার ৪৭১ জন।

নাসিমা সুলতানা বলেন, “আপনারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন, আগামীকাল থেকে এই অনলাইন বুলেটিন আর হবে না। তবে আগের মতই প্রেস রিলিজ আকারে তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।”

নিয়ম মানছে না গণপরিবহন

বিআরটিএ ও বিআরটিসির সিলেট জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের ‘গণপরিবহনের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা হচ্ছে না’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, “কিছু কিছু গণপরিবহনে করোনাকালের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা হিসেবে সমন্বিত ভাড়া মেনে চলছে না এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাড়ি চালানোর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ অর্ধেক আসন খালি রাখার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে শতভাগ আসনে যাত্রী পরিবহন করছেন।”

আগে এই প্রবণতা ‘না থাকলেও’ ঈদের সময় থেকে সব আসনে যাত্রী তোলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’।

“এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নির্দেশনা পালন ও স্বাস্থ্যবিধি পালনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিও আহ্বান জানাই।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করেনোভাইরাস সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছে’ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই অবস্থায় আমাদের সচেতনতা আরও বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে ঢাকায় লক্ষণ ছাড়াও সংক্রমণ ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। একদিকে আমাদের মাস্ক পরিধান করা অতি আবশ্যক এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, অন্যদিকে প্রতিরোধ বব্যস্থা জোরদারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।”

করোনাভাইরাস আক্রান্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রোগমুক্তিও কামনা করেন সেতুমন্ত্রী।