বেগম ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিবের ৯০তম জন্মদিনে শনিবার আওয়ামী লীগের আয়োজনে ‘বঙ্গমাতা-গৃহকোণ থেকে জনগণের হৃদয়ে’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদের স্মৃতিচারণা, আলোচনায় উঠে এলো তার জীবনের নানা দিক। তাদের ভাষ্যে, সময়কে অতিক্রম করে ‘জননী সাহসিকতা’ বেগম মুজিব হয়ে উঠেছেন চিরন্তন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর স্মৃতিচারণায় উঠে আসে ছয় দফা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নানা ভূমিকা।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্থাপন করেন বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা। সেই ছয় দফার সমর্থনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করেন সে সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা আমির হোসেন আমু।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। তার অনুপস্থিতিতে আমাদের সাহস, পরামর্শ…. এমনকি আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন বেগম মুজিব। ঈদের জন্য জমানো টাকা তিনি আমাদের দিতেন।”
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে উত্তাল দিনগুলোতে পাকিস্তানি শাসকের রক্তচক্ষু, শত বাধা এড়িয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কীভাবে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করতেন, তাও উঠে আসে বর্ষীয়ান রাজনীতিক আমুর বয়ানে।
“তখন বেশি কড়াকড়ি হলে বেগম মুজিব গোপনে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। দুটি বাসা ছিল। তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ জানাতেন। আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানাতেন।”
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাঠে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ‘ঐশ্বরিক ক্ষমতার’ নিদর্শন পাওয়া যাবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু তার লেখনীর মাধ্যমে তাকে (বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে) মূল্যায়ন করেছেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে বড় আশির্বাদ। তার জন্যেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করতে পেরেছিলেন।
“অসমাপ্ত আত্মজীবনী- পাঠ করলেই আমরা দেখতে পাই, বেগম মুজিবের ত্যাগের নমুনা, নানা দৃষ্টান্ত। বেগম মুজিবের মধ্যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল।”
আমির হোসেন আমু বলেন, “তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্না, তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ছিল অসম্ভব প্রখর। মানুষকে দেখা মাত্রই তার চরিত্র সম্পর্কে বলে দিতে পারতেন। আমি এমন কয়েকজনের কথা জানি, যাদের সম্পর্কে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হয়ত ভিন্নমত করেছিলেন, কিন্তু পরে দেখা গেল বেগম মুজিব যেটা বলেছেন, সেটাই সঠিক।”
কলামনিস্ট সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় এই আলোচনায় যোগ দেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমদ, বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্ত।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, “তিনি শান্ত, ধীর স্থির, ধৈর্য্যশীল, সাহসী, প্রজ্ঞাবান, তেজস্বিনী ও অমায়িক। কঠিন সংকল্পে আপসহীন থাকার প্রেরণা দিয়েছেন তিনি বঙ্গবন্ধুকে। তিনি জননী সাহসিকতা চিরন্তন।”
অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “বেগম মুজিব ছিলেন বিয়ন্ড দ্য টাইম। তিনি শুধু গ্রাম বাংলার শাশ্বত নারী ছিলেন তা নয়, তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ দিতে সাহায্য করেছে। বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা। তার দৃঢ়তা, মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব জাতির পিতার উপরেও প্রভাব রেখেছিল- একথা অনস্বীকার্য।”
বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির পাশেই ছিল অধ্যাপক নাসরীন আহমেদদের বাড়ি। নাসরীন আহমেদ বঙ্গমাতাকে ডাকতেন ‘মামি’ বলে।
পঁচাত্তরের জুলাইয়ের এক বিকালের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “তখন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা জার্মানি চলে গেছেন। এক বিকালে গিয়ে দেখি মামি দাঁড়িয়ে আছেন শেখ হাসিনার ঘরের জানালার পাশে। তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সেখানে একজন সেন্ট্রি বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি সেদিন বলেছিলেন, আজকে ওর বন্দুকটা মাটির দিকে তাক করে আছে। একদিন এই বন্দুকটা এই বাড়ির দিকে তাক করবে। মামির সেই কথা তো অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে।”
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, “বঙ্গমাতাকে ইতিহাসের মধ্যে আনতে হবে। তাকে নিয়ে গবেষণা করতে হবে।”