সিনহা হত্যা নিয়ে ‘অশুভ চক্রের উসকানি’: কাদের

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ ‘সরকার হটানোর দিবা স্বপ্ন’ দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2020, 09:11 AM
Updated : 7 August 2020, 09:11 AM

শুক্রবার ঢাকায় নিজের সরকারি বাসা থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “একটি অশুভ চক্র নানান ইস্যুতে গুজব রটনা ও অপপ্রচারে লিপ্ত। সাবেক সেনা সদস্য মেজর রাশেদের মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে কেউ কেউ দুই বাহিনীর মধ্যে উসকানি দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণ এসব বিষয়ে সচেতন রয়েছে। এ ধরনের ঘটনাকে ইস্যু করে সরকার হটানোর মত দিবা স্বপ্ন দেখছে কেউ কেউ।”

দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সিনহা মো. রাশেদ খান একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের কথা জানিয়ে সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। এই ঘটনায় পুলিশ মামলাও করে।

তবে পুলিশের এই ভাষ্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। টেকনাফ থানার ওসিসহ ২১ পুলিশ সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া হয় দায়িত্ব থেকে।

সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস মামলা করলে আদালতের নির্দেশে তা নথিভুক্ত করে টেকনাফ থানা। ওই মামলায় আত্মসমর্পণের পর ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলিসহ তিন পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবার র‌্যাবের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। 

এর আগে বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ কক্সবাজারে গিয়ে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, এই ঘটনায় দায়ী হিসেবে যে বা যারা চিহ্নিত হবে, তারাই শাস্তি পাবে। এর দায় বাহিনীর উপর পড়বে না।

গুজব ও অপপ্রচার বন্ধে দেশ-বিদেশে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি গুজব রটনা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার বন্ধে দেশ বিদেশে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। শেখ হাসিনা সরকার কারও হাতে ইস্যু তুলে দেবে না। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে।” 

শেখ হাসিনার সরকারের শেকড় ‘এ দেশের মাটির অনেক গভীরে’ মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “গুজব রটিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে কোনো লাভ হবে না। আপনারা দেখেছেন এ বিষয়ে সরকার অত্যান্ত আন্তরিক। ইতোমধ্যে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

মহামারী প্রসঙ্গ

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনে অনেকের ‘শিথিল’ আচরণ চলমান পরিস্থিতিকে ঝুকিপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নূতন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ এখন ইতালিকে ছাড়িয়ে সংক্রমণে ১৫তম অবস্থানে। দেশে কয়েক সপ্তাহ একটি নির্দিষ্ট ট্রেন্ড থাকলেও এ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা বাড়ার সাথে সাথে সংক্রমণের হারও বেশি দেখা যাচ্ছে।

“অপর দিকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকের লক্ষণ দেখা গেলেও নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। পরীক্ষার প্রতি অবহেলা, স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে শৈথিল্য আমাদের চলমান পরিস্থিতিকে যেকোনো সময়ে ঝুকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।”

মানুষকে মাস্ক পরার বিষয়ে সচেতন করতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, ঈদের সময় টার্মিনাল এবং পরিবহনে কেউ কেউ মানলেও অনেকেই স্বাস্থ্যবিধির ‘তোয়াক্কা করেননি’।

তবে এবারের ঈদ যাত্রা ‘স্বস্তির হয়েছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “ফেরিঘাটের সমস্যা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ছাড়া অন্যান্য সকল মাহাসড়কে ভ্রমণ স্বস্তিদায়ক ছিল। আমি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জেলা প্রশাসন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সড়ক প্রকৌশলীদের ধন্যবাদ জানাই।”