কামালের সঙ্গে জোট নিয়ে খালেদার অসন্তোষের খবর ঠিক নয়: ফখরুল

গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে বিএনপির একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ‘খালেদা জিয়ার অসন্তোষ প্রকাশের’ খবর সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2020, 01:03 PM
Updated : 5 August 2020, 01:05 PM

তিনি বলেছেন, “এ বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সম্পূর্ণ অসত্য, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।”

কোরবানির ঈদের রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্য ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বলে খবর প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “নেতাদের উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া বলেছেন, আপনারা কেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট করতে গেলেন, কেনো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে গেলেন? আবার গেছেন, আগে কেন এজেন্ডা ঠিক করলেন না?”

কোরবানির ঈদের রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে গুলশানে তার বাসভবন ফিরোজার সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকাকালে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তার ছেলে এক যুগের বেশি সময় ধরে লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান।

এরমধ্যে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে পাঁচ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি। সে সময় নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সংলাপেও বসেন তারা।

পরে কামাল হোসেনের নেতৃত্বেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভরাডুবি হয় বিএনপির। তাদের মাত্র সাতজন প্রার্থী ওই নির্বাচনে জয় লাভ করেন, আর কামাল হোসেনের দল থেকে দুজন নির্বাচিত হন। কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিলেও পরে তাদের সব সংসদ সদস্যই শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিয়েছেন।   

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের বরাত দিয়ে যুগান্তরের প্রতিবেদনে কামাল হোসেনের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়েও বিএনপি চেয়ারপারসন কথা বলেছেন বলে বলা হয়েছে।

“আপনারা ড. কামাল হোসেনকে জাতীয় নেতা বানালেন! কিন্তু তিনি (ড. কামাল) কবে জাতীয় নেতা ছিলেন? তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কী করেছেন? তিনি তো জাতীয়তাবাদী শক্তির কেউ নন। তার সঙ্গে তো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, আদর্শিক নয়। তিনি তো সব সময় তার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই বলেন। ড. কামাল যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতেন তাহলে তো এ সরকার থাকত না,” বলা হয়েছে খালেদা জিয়াকে উদ্ধৃত করে।

তবে এই খবর অস্বীকার করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ ধরনের কোনো কথাই বলেননি তাদের নেত্রী।

তিনি বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, জাতীয় ঐক্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো অবকাশ নেই। জাতীয় ঐক্য নিয়ে শুধুমাত্র বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য এই ধরনের অপপ্রচার ও সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য মহল বিশেষ এই ষড়যন্ত্র করছে বলে আমরা মনে করি।”

গত ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাড়ি ফিরোজায় ওঠেন খালেদা জিয়া; তারপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি। ছবি: বাবুল তালুকদার

ঈদের দিন ওই সাক্ষাতে শুধু ‘সুখ-দুঃখের’ কথা হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। ঈদের দিন আমরা শুধু মাত্র তার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। ঈদের সময়ে যেসব কথা হয়, তা হয়েছে। আমরা আমাদের সুখ-দুঃখের কথা বলেছি মাত্র।

“আমাদের কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো বক্তব্য দেননি, তিনি কোনো মন্তব্যই করেননি। তিনি আমাদের কথা-বার্তা শুনেছেন।”

জিয়া এতিমখানা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাবন্দি হন। বছরখানেক পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে ছিলেন তিনি। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বছরখানেকের মতো কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এরমধ্যে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিলে সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে গত ২৫ মার্চ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে গুলশানের তার বাসভবন ‘ফিরোজায়’ আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া মুক্ত হওয়ার পর গত ২৫ মে ঈদুল ফিতরের দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রথম ওই বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। এরপরে আবারও ঈদের দিনে এই সাক্ষাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ছিলেন।