বন্যা মোকাবিলায় ‘জাতীয় উদ্যোগ’ চায় বিএনপি

বন্যা মোকাবিলা সরকারকে ‘দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে’ জাতীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2020, 09:15 AM
Updated : 31 July 2020, 09:15 AM

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানান।

তিনি বলেন, “আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে মনে করি, এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আওয়ামী লীগের ভঙ্গুর আর দুর্নীতিবাজ প্রশাসন দিয়ে সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।”

এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা তিন দফা বন্যায় দেশের ৩১ শতাংশের বেশি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অর্ধকোটি সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

রিজভী বলেন, “সরকারকে বলব, একগুয়েমি বাদ দিয়ে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিন। বন্যা দুর্গতদের জন্য বিনামূ্ল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করুন, স্কুল-কলেজে আর বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া বানভাসি পরিবারগুলোর জন্য লঙ্গরখানা খুলুন।”

বন্যা কবলিত এলাকায় কৃষকদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে নগদ অর্থ প্রদান, বিনামূল্যে বীজ ও বীজতলা তৈরির ট্রে সরবারহ, খামারিদের গবাদি পশুর জন্য সরকারিভাবে আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, গো-খাদ্যের সঙ্কট নিরসন এবং এলাকাভিত্তিক ত্রাণ বণ্টনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানান রিজভী। 

তিনি বলেন, “বন্যার পানি বাড়ছে প্রতিদিনই, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। হাঁস-মুরগি আর গবাদি পশু নিয়ে বন্যাকবলিত মানুষরা পড়েছেন মহাবিপদে। দুর্গতরা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও জ্বালানি সঙ্কটে ভুগছে। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বানভাসি মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি।”

এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতার যে কথা বলা হচ্ছে, তা ‘অনেকটাই প্রচার সর্বস্ব ফাঁপা আওয়াজ’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, “শাসকগোষ্ঠী একেবারেই উদাসীন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো চলমান বন্যাদুর্গতদের জন্য চাহিদার যে সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে দেখা গেছে, বন্যা কবলিত ৮০ শতাংশ মানুষ নিয়মিত খাবার পাচ্ছে না।

“সরকারের তথ্য বিবরণীতে দাবি করা হয়েছে, বন্যা কবলিত ৩১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ মিলছে না।”

রিজভী বলেন, “খবরের কাগজে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বগুড়ার সারিয়াকান্দিসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যা কবলিত মানুষের পাতে ভাতের বদলে শুধু পাট শাক। আক্ষরিক অর্থেই জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কবিতার অবিকল চিত্র আজ বন্যা কবলিত প্রতিটি জনপদে দেখা যাচ্ছে- ‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসেনা নিদ, মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?’

‘চামড়া সিন্ডিকেট বেপরোয়া’

গতবছরের মত এবারও কোরবানি ঈদের আগে সরকার ‘আওয়ামী লীগের চমড়া সিন্ডিকেটের’ স্বার্থ রক্ষায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “নানা অজুহাতে এ বছর চামড়ার দাম কমানো হয়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৯ শতাংশ। চামড়ার মূল্য না থাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে দেশের চামড়ার বাজার। দামে ধস নামায় প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি এই টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গরিব ও এতিম জনগোষ্ঠী।”

এবার মহামারীর কারণে চামড়া নিয়ে সঙ্কট আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “যেভাবে পাট শিল্পকে ধ্বংস করা হয়ে্ছে, ঠিক সেই পথেই ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের ট্যানারি শিল্প। সরকারের ভেতরে একটি মহল সিন্ডিকেট করে কওমী মাদ্রাসা এবং চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করে নিজেরা ফয়দা লুটতে চায়।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন হয়।

কোরবানির ঈদের প্রাক্কালে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান রিজভী।