হাতের তালু দিয়ে আকাশ ঢাকা যায় না, ফখরুলকে কাদেরের জবাব

প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েও মিথ্যাচার ও অপরাজনীতির বৃত্ত থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2020, 11:53 AM
Updated : 28 July 2020, 11:53 AM

তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, এ বন্যা নাকি সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল। বিষয়টি হাস্যকর। প্রত্যেকটি বিষয়ের সাথে সরকারের সমালোচনা, মিথ্যাচার বিএনপির চিরায়ত ঐতিহ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েও মিথ্যাচার ও অপরাজনীতির বৃত্ত থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসতে পারেনি।”

মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশকে সৌজন্য সাক্ষাৎ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি তার কাছে জানতে চাই, সম্প্রতি চীনের ইয়াংজী নদী অববাহিকার ভয়াবহ বন্যা কি চীনের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল? জাপান ও আসামের বন্যাও কি একই কারণে? তাহলে বিএনপি আমলের যে বন্যা হয়েছিল তা কোন নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে হয়েছিল, জানাবেন কি?

সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব ওই মন্তব্য করেছিলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আপনারা জানেন, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বন্যা মধ্যাঞ্চলকে প্লাবিত আছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। চলছে খাদ্যসহ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম। বিএনপি মহাসচিব বন্যার্তদের সহায়তায় সরকারের কোনো ধরনের প্রয়াস খুঁজে পাচ্ছেন না, চোখে দেখছেন না। রাজধানীতে বসে বসে প্রেস ব্রিফিংয়ে মিথ্যাচার করলে দেখতে পাওয়ার কথা নয়।

“বন্যা গুলশানে নয়, দেশের ৩১টি জেলাকে প্লাবিত করছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্ধ হয়ে থাকলে সরকারের উদ্যোগ ও সহায়তা দেখতে পাওয়ার কথা নয়। হাতের তালু দিয়ে আকাশ ঢাকা যায় না। বিএনপি না দেখলেও দেশের মানুষ এবং দুর্গত এলাকার মানুষ সরকারের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখছে ও উপকৃত হচ্ছে।”

বন্যায় আওয়ামী লীগ ও সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের ৩১টি জেলায় বন্যার্তদের সহায়তায় এক হাজার ৬০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশাকেন্দ্রে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় ৮০ হাজার গবাদি পশুর আশ্রয় হয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় প্রায় নয়শ মেডিকেল টিম কাজ করছে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। অশ্রিয়কেন্দ্রে মানুষদের রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে ।

তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত ৩৯টি জেলার ১৫টি উপজেলায় পানিবন্দি প্রায় দশ লাখ পরিবারের প্রায় ৪৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের কাছে ১২ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন চাল সবরাহ করা হয়েছে, যার মধ্যে থেকে বিতরণ করা হয়েছে সাত হাজার টনের বেশি। প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টন মজুদ রয়েছে।

নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তিন কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এক লাখ ৩২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশু খাদ্য সংগ্রহে ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গো-খাদ্যের জন্য দুই কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।”

ওবায়দুল কাদের জানান, পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য নৌকাসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিতরণ করা হচ্ছে খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রম। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটর করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিচ্ছেন। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিদেশগামীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

এজন্য তিনি বিদেশগামীদের ভোগান্তি কমাতে নমুনা পরীক্ষায় একটি যৌক্তিক সময় নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ৎ

তিনি বলেন, “সম্প্রতি লক্ষণ দেখা দিলেও অনেকে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছে না। কোনো কোনো হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা, নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ, নমুনা গ্রহণে দীর্ঘ লাইন ও স্যাম্পল প্রদানে অপ্রয়োজনীয় সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি কারণে পরীক্ষার প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ছে।

“অপরদিকে টেলিমেডিসিনের আওতা বাড়ায় ঘরে বসেই অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। সাধারণ রোগীরাও বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না। রোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হাসপাতালগুলাকে দৃশ্যমান সেবার মান ও আন্তরিকতা বাড়াতে হবে। নমুনা পরীক্ষা হতে দূরে থাকলে একজন রোগী অনেককে সংক্রমিত করতে পারে।”