জাপায় জি এম কাদেরের ‘শেষ’ দেখছেন বিদিশা

রাজনীতিতে ফের আগ্রহী হয়ে ওঠা বিদিশা মনে করছেন, জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের কর্তৃত্ব আর টিকছে না।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2020, 02:56 PM
Updated : 27 July 2020, 03:19 PM

জাতীয় পার্টিতে বিদিশার প্রয়োজন নেই- জি এম কাদেরের এই মন্তব্যে এই প্রতিক্রিয়া আসে এইচ এম এরশাদের সাবেক স্ত্রীর কাছ থেকে।

বিদিশা সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন যে চেয়ারম্যান এসেছে, তিনি নিজেই তো একজন বিতর্কিত চেয়ারম্যান।

“উনি এখন কদিন চেয়ারম্যান আছেন, সেটাই দেখার বিষয় অবশ্য। এটা আমরা দেখার অপেক্ষায় আছি।”

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদকে বিয়ের পর দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও পরে গুটিয়ে যেতে হয়েছিল বিদিশাকে। পরে এরশাদের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটলে জাতীয় পার্টিতে আর ফেরার সুযোগ ছিল না তার।

তখন এরশাদের প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে বিদিশা ও জিএম কাদেরকে এক পক্ষে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর পর উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে।

বিদিশা (ফাইল ছবি)

জিএম কাদেরের আপত্তি উপেক্ষা করে ছেলে শাহতা জারাব এরিক এরশাদের সঙ্গে এরশাদের বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে উঠে আসা বিদিশা দাবি করেন, তাকে ‘ভয়’ পাচ্ছেন এরশাদের ভাই।

“এখন যে সিচুয়েশন, আমার জনপ্রিয়তা দেখে ভয় পাচ্ছেন এখনকার চেয়ারম্যান।”

গত বছরের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই বসে যান চেয়ারম্যানের আসনে।

রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদের

এরপর জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিতে দ্বন্দ্বে জড়ান ভাবি রওশন এরশাদের সঙ্গে। রওশনের নেতৃত্বে তখন আলাদা কমিটির ঘোষণাও এসেছিল।

পরে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকের পর চেয়ারম্যানের পদে থাকলেও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদটি রওশনকে ছেড়ে দিতে হয় জি এম কাদেরকে।

এরপর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির নবম কাউন্সিলে জিএম কাদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

তবে তার তিন দিন আগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. জহিরউদ্দিন চেয়ারম্যানের পদে জি এম কাদেরের থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

তখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।

সে আইনি লড়াইয়ের সুরাহা এখনও হয়নি বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন।

রওশনের সঙ্গে কাদেরের বিরোধ আপাত অবসান ঘটলেও সম্প্রতি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর কথায় বিদিশার ফের রাজনীতিতে আসার ইঙ্গিতে দলটিতে ফের টানাপড়েন দেখা দিয়েছে।

রোববার জি এম কাদের রাঙ্গাঁকে মহাসচিবের পদ থেকে বাদ দিয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে ওই পদে ফিরিয়ে আনেন।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়া এমন সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলেছেন রাঙ্গাঁ।

তা সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিদিশা বলছেন, রাঙ্গাঁকে এভাবে পদচ্যুত করা ‘একনায়কতান্ত্রিক’ আচরণ।

“গণতান্ত্রিকভাবে কাজটা করা হয়নি। তিনি (জি এম কাদের) রেজ্যুলেশন সৃষ্টি করে ভালোমতো জিনিসটা করলেন। গঠনতন্ত্রের ২০ এর ক-ধারা প্রয়োগ করে চেয়ারম্যান সাহেব ক্ষমতার জোরে এটা করেছেন, একনায়কতন্ত্র যেটাকে বলে আর কী।”

স্ত্রী হিসেবে এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বিদিশা

তবে এরশাদ তার জীবদ্দশায় জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের এই ধারাটির প্রয়োগ অহরহ করেছেন।

গত নির্বাচনের আগে কয়েকবার মহাসচিব বদলেছিলেন তিনি। তখন বাবলুকেও তিনি সরিয়েছিলেন। ভোটের আগে রাঙ্গাঁকে মহাসচিব করা হয়েছিল ওই চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতায়ই।

বিদিশা বলেন, “রাঙ্গাঁর কি দোষ ত্রুটি বা কী গুণ… তাকে তো সুযোগ দেওয়া যেত। তার সাথে আলাপ করার পর ঠিক করলে পারতেন। সমস্যা বা কোনো ফল্ট থাকলে সেটা দলীয় ফোরামে আলাপ আলোচনা করে করলে ভালো হত।

“নতুন যাকে …..বাবলু ভাইকে যে মহাসচিব পদ দিলেন একক ক্ষমতাবলে…. দুদিন পরে দেখা গেল যে তিনি বাবলু ভাইকেও সরিয়ে দিলেন একইভাবে…. অগণতান্ত্রিকভাবে।”

“এখন চেয়ারম্যান সাহেবের উপর যে কি অহি নাজিল হয়েছে তা আল্লাহ বলতে পারবেন,” মন্তব্য করেন বিদিশা।

ছোট ভাই জিএম কাদেরের সঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (ফাইল ছবি)

রাজনীতিতে ফের আসার ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “কয় দিনের মধ্যে, কয় বছরের মধ্যে আমি রাজনীতিতে আসব, এটা তো কেউ বলতে পারে না।

“রাজনীতি আমি অবশ্যই করব। জনগণের চাওয়াটাকে আমি প্রাধান্য দেব এখানে। রাজনীতি করার অধিকার প্রত্যেকের আছে। জনগণের জন্য, সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য রাজনীতি করতে চাই।”

তিনি বলেন, “তৃণমূলে সার্ভে করে দেখেন, রংপুরে খোঁজ নেন। রংপুরের নেতারা সবাই চাচ্ছে আমি রাজনীতিতে আসি।

“এরশাদ সাহেবের নেতাকর্মী এটাই তো বড় শক্তি…. রংপুরের মানুষ আমার বড় শক্তি।

মহাসচিবের পদ হারানো রাঙ্গাঁ ‘রংপুরের মানুষ’দের নিয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গড়ার হুমকিও দিয়েছিলেন।

এরশাদের মৃত্যুর পর তার ও রওশন এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি শাদ এরশাদ রংপর সদরে বাবার আসনে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে রংপুরের জাতীয় পার্টির একাংশ তার বিরোধিতায় নেমেছিল।

এরশাদের ভাই জিএম কাদের নির্বাচন করেন লালমনিরহাট জেলার একটি আসনে।

ছোট ছেলে এরিককে নিয়ে এরশাদ তার বারিধারার বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে থাকতেন। অটিস্টিক এরিককে বিশাল সম্পতি তিনি দিলেও তার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করে দিয়ে যান তিনি।

গত বছরের জুলাইয়ে এরশাদের মৃত্যুর পর বিদিশা ‘জোর করে’ প্রেসিডেন্ট পার্কে উঠে পড়েন। তার অটিস্টিক ছেলে এরিককে ‘চরম অবহেলা করে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটানো হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পরে নানা ঘটনা, পাল্টাপাল্টি জিডির পর বিদিশা এখনও প্রেসিডেন্ট পার্কেই অবস্থান করছেন ছেলের সঙ্গে।