উপ নির্বাচন: বগুড়া ও যশোরে চলছে নিয়ম রক্ষার ভোট

মহামারী ও বন্যার মধ্যেই যশোর-৬ ও বগুড়া-১ সংসদীয় আসনে ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার’ উপ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2020, 04:19 AM
Updated : 14 July 2020, 07:17 AM

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবাল সকাল ৯টায় দুই নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, একটানা চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

এর মধ্যে বগুড়ায় বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় ১৬টি ভোটকেন্দ্র স্থানান্তর করে অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে বগুড়া-১ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির উপসচিব মাহবুব আলম শাহ জানিয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, আগের দিন ভোটের সরঞ্জাম ও সুরক্ষা সামগ্রী কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হলেও ব্যালট পেপার পৌঁছানো হয়েছে মঙ্গলবার সকালে ভোট শুরুর আগে।

বগুড়ার একটি কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগে ভোটারদের হাতে দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজার

রিটার্নিং কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ভোটার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী রাখা হয়েছে। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট দেবেন। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখবেন এবং নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখবেন।

সাড়ে পাঁচ লাখ ভোটারের এ দুই উপ নির্বাচনে সুরক্ষ সামগ্রীর জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রথাগতভাবে নির্বাচন পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

যশোর-৬ (কেশবপুর)

ভোটার: ২ লাখ ৩ হাজার ১৮ জন

প্রার্থী: শাহীন চাকলাদার (নৌকা), আবুল হোসেন আজাদ (ধানের শীষ) ও  হাবিবুর রহমান হাবিব (লাঙ্গল)

 বগুড়া-১  (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা)

ভোটার: ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৩ জন।

প্রার্থী: সাহাদারা মান্নান (নৌকা), একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির (ধানের শীষ), মোকছেদুল আলম (লাঙ্গল), মো. রনি (বাঘ), নজরুল ইসলাম (বটগাছ) ও ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ (স্বতন্ত্র- ট্রাক)।

 ১৮ জানুয়ারি সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ এবং ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে যশোর-৬ আসন ফাঁকা হয়। গত ২৯ মার্চ এ দুটি উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মহামারীর কারণে তা স্থগিত করা হয়।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আসন শূন্য পরবর্তী ৯০ দিন এবং দৈব-দূর্বিপাকে আরও ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ১৪ জুলাই উপ-নির্বাচন হচ্ছে।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও ভোট নিয়ে তাদের অনীহার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর জন্য এটা হতে যাচ্ছে অনেকটা ‘আনুষ্ঠানিকতার’ নির্বাচন। বিএনপি বলছে, এ সময় ভোটে অংশগ্রহণ থাকবে না; আর জাতীয় পার্টি ভোট পেছানোর দাবি জানিয়ে সাড়া পায়নি।

বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচনের এ ভোটকেন্দ্রটি বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভোগ্রহণের ব্যবস্থা হয়েছে অন্য জায়গায়

বন্যার মধ্যেই ভোট

বগুড়া-১ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহ বলেন, সকাল ৮টার মধ্যে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে সকাল ৯টা থেকে ভোট শুরু হয়েছে।

“যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার ১৬টি ভোটকেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়েছে।”

সকাল সোয়া ৯টায় সরিয়াকান্দির মথুরাপাড়া ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে মাত্র আটজন ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ভোটের বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।

মথুরাপাড়া বি কে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাডিং অফিসার সুলতান মাহমুদ জানান, ওই ভোট কেন্দ্র ছিল কর্নীবাড়ী নিজাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে। বন্যার কারণে ভোট কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক ১৭-১৯ জন নিরাপত্তা সদস্য; নির্বাচনী এলাকায় র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা সদস্য, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম মাঠে রয়েছে।

বগুড়ার একটি কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগে ভোটারদের হাতে দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজার

স্বাস্থ্যবিধির তোড়জোড়

যশোর-৬ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন অফিসার হুমায়ুন কবির বলেন, মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট গ্রহণই এখন ‘বড় চ্যালেঞ্জ’। এ জন্য কেন্দ্রে ‘সব ধরনের ব্যবস্থা’ রাখা হয়েছে।

“প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যানার রাখা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার জন্য। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে ভোট দেওয়া এবং সঠিকভাবে কেন্দ্র ত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সংক্রমণ ঝুঁকি মাথায় রেখে আমরা তৎপর রয়েছি।”

হুমায়ুন কবির বলেন, ভোট নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ভোটারদেরও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। সেজন্য প্রার্থীরাও সচেতন থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে।

ব্যয় সাড়ে তিন কোটি টাকা

যশোর ও বগুড়া উপ নির্বাচন গত ২৯ মার্চ হওয়ার কথা ছিল। ওই সময়ে ভোট আয়োজনের সব ধরনের ব্যয় বরাদ্দও করা হয়েছিল। ভোটের এক সপ্তাহ আগে ২১ মার্চ তা মহামারীর কারণে স্থগিত হয়ে যায়।

এখন সেই মহামারীর মধ্যেই দুই আসনের উপ নির্বাচন হচ্ছে। ভোটের সময় বাড়ায় ব্যয়ও সামান্য বেড়েছে। নির্বাচন পরিচালনা, আইন শৃঙ্খলা ও সুরক্ষা সামগ্রী সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলে ইসির বাজেট শাখার কর্মকর্তারা জানান।

ইসির উপসচিব (বাজেট) এনামুল হক বলেন, দুই উপ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সম্মানীভাতা ভোটের বড় ব্যয়। ব্যালট পেপারের এ ভোটে নির্বাচন পরিচালনা খাতের আনুষঙ্গিক ব্যয় যোগ হবে তার সঙ্গে। আর থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমের জন্য ব্যয় বরাদ্দ।

“দুই উপ নির্বাচনে অন্তত সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় হবে বলা যেতে পারে। ভোট শেষে পূর্ণাঙ্গ তথ্য বলা যাবে। সুরক্ষা সামগ্রী স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য ব্যয় বরাদ্দ কম-বেশি হতে পারে।”

পুরনো খবর