দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিল রাখা উচিত: সুজন

নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ না করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্ত শিথিল রাখা উচিত বলে মত দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2020, 03:51 PM
Updated : 2 July 2020, 03:51 PM

বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের খসড়া’ নিয়ে এ মতামত দিয়েছে বেসরকারি সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, “সুজন মনে করে, নতুন দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নতুন আইনের খসড়ায় উল্লেখিত প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। নিবন্ধনের পূর্বশর্তগুলোতে খুব বেশি কড়াকড়ি না করে বরং কিছুটা শিথিল রাখা উচিত, যাতে নতুন  রাজনৈতিক শক্তির উন্মেষের পথ খোলা থাকে।”

সেই সঙ্গে দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কমিশনকে কোনো ছাড় না দেওয়ার সুপারিশ করা হয় সুজনের সংবাদ সম্মেলনে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের অধীনে ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন চালু হয়। বর্তমানে ৪১টি দল নিবন্ধিত রয়েছে।

আরপিওর ৯০ (এ) থেকে ৯০ (ই) পর্যন্ত অনুচ্ছেদ নিয়ে এখন আলাদাভাবে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন’ নামে বাংলায় নতুন একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত ও বিধি-বিধানে কয়েকটি নতুন বিষয় যুক্ত করে কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে।

এ বিষয়ে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে অংশীজনদের মতামত চেয়ে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, নতুন দলের নিবন্ধন পেতে তিনটি শর্তের মধ্যে অন্তত দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে।

১. আবেদন করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসন পেতে হবে। ২. ওই সংসদ নির্বাচনে যে কোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে। ৩.  যদি দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি থাকে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকে।

বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়।

১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে দলটির অন্তত একজন যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২. যে কোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী যদি অংশ নেওয়া আসনগুলোতে বাক্সে পড়া মোট ভোটের ৫ শতাংশ পায়। ৩.  যদি দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি থাকে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকে।

বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০-এর খ-এর খ (২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং ২০২০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে। ২০০৮ সালে নিবন্ধন পাওয়া অধিকাংশ দল এখনও তা পূরণ করতে পারেনি।

নতুন আইনের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধি রাখার শর্ত পূরণে দলগুলোকেই তাদের গঠনতন্ত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।

সুজন বলছে, নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বড়জোর দুই বছর সময় বেঁধে দিতে পারে ইসি। 

খসড়া আইনে বিষয়টি দলের উপর ছেড়ে দেওয়ার সমালোচনা করে সুজনের সমন্বয়কারী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের মত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আত্মঘাতী।... এটা এক দিকে যেমন রাজনৈতিক দলের কাছে নির্বাচন কমিশনের নতজানু মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ, তেমনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ তথা নারীর ক্ষমতায়নের পরিপন্থি।”

সুজনের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদের সভাপতিত্বে সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দার খান, রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি মুজবাহ আলীম এবং ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।