নথি ছিঁড়ে সংসদের অবমাননা করেছেন বিএনপির এমপিরা: কাদের

প্রত্যাখ্যানের নামে সংসদ ভবনের সামনে বাজেটের কপি ছিঁড়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের ‘চরম অবমাননা’ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2020, 12:58 PM
Updated : 2 July 2020, 03:48 PM

বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের সরকারি বাসভবনে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী কাদের।

বাজেটের কপি ছেঁড়ার নিন্দা করে তিনি বলেন, “এটি তাদের শপথ ভঙ্গেরও শামিল। জাতির এই ক্রান্তিকালে তারা দায়িত্বশীল আচরণ করেনি।

“তারা চেয়েছিল সংসদ যাতে কোনো বাজেট পাশ না করে। বাজেট ছাড়া একটি রাষ্ট্র তারা দেখতে চেয়েছিল। তারা দেশে একটি হতাশাজনক অবস্থা দেখতে চেয়েছিল। আমরা মানুষের মধ্যে আশার আলোর সঞ্চার করতে পেরেছি, যা এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রয়োজন।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এই বাজেটের প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ দেশীয় বাস্তবতা, করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এদেশের মানুষের জন্য তার সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও সহায়তা এবং বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে তার গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ তথা বিশ্ব মানবতার এই ক্রান্তিলগ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই ভাষণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মহামারীর মধ্যেই বাজেট প্রণয়ণের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের আর্থিক বছরের গণনা আমাদের চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় (যেমন জানুয়ারি টু ডিসেম্বর, এপ্রিল টু মার্চ, অক্টোবর টু সেপ্টেম্বর) তাদের এই সময়ে বাজেট করতে হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এই সময়ে যে সকল দেশ বাজেট প্রণয়ন করেছে, তাদের অধিকাংশই করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে সংকোচন করেছে।

“কোন কোন দেশ বাজেট দিতে ব্যর্থ হয়ে বিশেষ আইনের সহায়তায় বাজেট প্রণয়ন স্থগিত করেছে। এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুই একটি দেশসহ (যেমন পাকিস্তান) পৃথিবীর অনেক দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।”

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে সাময়িক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে তা মেটানো এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়-ক্ষতি সৃষ্টি হবে তা পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

 

“এ বাজেটে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষার উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে,” বলেন তিনি।

এই বাজেটকে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে অধিকতর বহুমুখীকরণের সুযোগ সৃষ্টি এবং নতুন সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল অভিহিত করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে সংকটকালীন ও সংকট পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার গতিপথ নির্ণয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই  এবারের বাজেট গৃহীত হয়েছে। এটি জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল।”

তিনি বলেন, “করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা ও কর্মোদ্যোগ বিশ্বখ্যাত দি ইকোনমিস্ট, ফোর্বস, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামসহ অন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। ইকোনমিস্ট গত ২ মে গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ৬৬টি উদীয়মান সফল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে নবম  অবস্থান রাখা হয়েছে।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবেলা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্রণোদনা প্যাকেজ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ, যা জিডিপির ৩.৭ শতাংশ।

“বিগত ১২ বছরে ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের হার ছিল গড়ে ১.৪ শতাংশ। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সুবিশাল আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নের কারণে কোভিড ১৯ মহামারির ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ার প্রভাবে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, শেখ হাসিনার সরকার তা অনেকটাই রোধ করতে পারবে বলে আশা করি।"

আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের হার আগের ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।