মহামারীকালে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে হিসেবে দেখছে দলটি।
‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে আইনের খসড়া’ নিয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীরের কাছে এ মত তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসে সচিবের কাছে মহাসচিবের চিঠি হস্তান্তর করেন।
চিঠিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রচলিত আইনের মৌলিক বিধানাবলী অক্ষুণ্ণ রেখে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা ভাষায় আইনের উদ্যোগকে আপাত দৃষ্টিতে ভালো। তবে কাজটি করার জন্যে যে সময় বেছে নেওয়া হয়েছে তা ‘অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য’।
“আমরা মনে করি, দেশের এ সঙ্কটময় সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সংশ্লিষ্টজনদের সঙ্গে সময় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে মতামত গ্রহণ এবং জনমত সংগ্রহ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব চূড়ান্ত করা উচিত হবে না। তাই প্রাসঙ্গিক নতুন আইন প্রণয়ন কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।”
বিএনপি বলছে, আরপিও এর ৯০ এ থেকে ৯০ আই অনুচ্ছেদ মূল আইনে না রেখে বাংলায় স্বতন্ত্র আইনের যে খসড়া করা হয়েছে তাতে ‘মৌলিক বিধানাবলী অক্ষুণ্ণ’ রাখা হয়নি।
“তাই এ খসড়া নতুন আইন শুধু এটা প্রণয়ের ঘোষিত উদ্যোগেরই পরিপন্থী নয়, বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমরা মনে করি। আদৌ জরুরি নয় এমন কাজে হাত দেওয়ার জন্য কমিশনের উদ্যোগ সামর্থ্যের অপব্যয় ও সন্দেহজনক।”
বাংলায় রূপান্তরের নামে অতি গুরুত্বপর্ণ কিছু নতুন শর্ত সংযোজন করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে গুরুত্বপূর্ণ আইনের মতো উদ্যোগ কোনোভাবে ‘স্বাভাবিক ও সময়োচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
১৬ জুন খসড়াটি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয় এবং জন মতামত সংগ্রেহে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে ই মেইলে (secretary@ecs.gov.bd) মতামত পাঠানোর জন্য বলা হয়।
খসড়া আইনে বাংলায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে ইংরেজি ও বিদেশি শব্দের বদলে বাংলাভাষায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনকে মহানগর, মেয়রকে মহানগর আধিকারিক; পৌরসভাকে নগর ও নগর সভা, মেয়রকে পুরাধ্যক্ষ বা নগরপিতা; কাউন্সিলরকে পরিষদ সদস্য; ওয়ার্ডকে মহল্লা; উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়ারম্যানকে উপজেলা পরিষদের প্রধান ও উপ প্রধান, ইউনিয়ন পরিষদকে পল্লি পরিষদ বলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে যে মতামত দিয়েছে তাতে ‘কমিশন’ ও পদবীতে ‘কমিশনার’ এর মতো ইংরেজি শব্দ অক্ষুণ্ণ রেখে জনপরিচিত স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নাম-পদবিতে পরিবর্তন আনাকে ‘অনৈতিক ও অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
দলটি বলছে, দেশের সংবিধানের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, কমিশন, কমিশনার ইত্যাদি এবং ইসির আইনে ভোটার, রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ অনেক ইংরেজি শব্দ বহাল রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলের নামও বাংলায়ন করা হয়নি।
চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, সিটি, করপোরেশনেরর মতো শব্দ বাংলা একাডেমির বাংলা অভিধানেও অনেক ইংরেজি শব্দ বাংলা প্রতিশব্দরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা অভিধানকে অগ্রাহ্য করার অধিকার কমিশন রাখে না বলে আমরা মনে করি।”
দলটির পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়। চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে এর অনুলিপি দেওয়া হয়।