বরাদ্দ কমাতে নোটিস, বক্তব্যে উল্টো দাবি

আইন বিচার ও বিচার বিভাগ খাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ কমাতে নোটিস দিলেও সেই প্রস্তাব তুলতে গিয়ে উল্টো কথা বললেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2020, 05:38 PM
Updated : 30 June 2020, 05:38 PM

মঙ্গলবার সংসদে বাজেটের মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় এ ঘটনা ঘটে।

ছাঁটাই প্রস্তাবকারী প্রায় সব সংসদ সদস্যই ওই মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বাড়াতেই বলেছেন। বেশি বরাদ্দ চাইতে না পারায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সমালোচনাও করেছেন।

এই বিপরীতমুখী আচরণের ব্যাখ্যায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য, সাবেক বিচারক মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আইনমন্ত্রী বরাদ্দ কম চাওয়ায় তাকে সচেতন করতেই তাদের এমন ভূমিকা।

সরকারের প্রত্যেক খাতের বাজেটে আলাদা আলাদা করে সংসদের অনুমোদন নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা মঞ্জুরি দাবি করলে তার বিরোধিতায় ছাঁটাই প্রস্তাব দেন বিরোধী দলের সদস্যরা।

ছাঁটাই প্রস্তাবে বরাদ্দ কম দেওয়ার দাবি জানানো হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তা নাকচ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট পাসের আগে ছাঁটাই প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “সামান্য গরু চুরি করে বছরের পর বছর কোর্টের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন। আর হাজার হাজার কোটি টাকা যারা চুরি করছে, তারা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! আইনে সমতা নেই। আমাদের টাকা দিতে অসুবিধা নেই। টাকা তো দিতেই হবে।”

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “বর্তমানে দেশে যে সংখ্যক বিচারপতি রয়েছেন তাদের নিয়ে দেশের বিদ্যমান মামলাগুলো ৩০ বছরেও শেষ হবে না।

“যদিও আমার এটা ছাঁটাই প্রস্তাব, তারপরেও বলছি, এত বড় বাজেট সেখানে মাত্র এক হাজার কোটি সামথিং বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ। এর সাথে লেজিসলেটিং উইংয়ের জন্য ৪০ কোটি। এটা তো প্রচুর হওয়া উচিত ছিল। আরও অনেক বেশি হওয়া দরকার ছিল।”

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। এ বিভাগ এখনো নির্বাহী বিভাগের অধীনে। সরকারের অঙ্গুলি নির্দেশে বিভিন্ন বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চিহ্নিত মাদক সম্রাট, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারী, সন্ত্রাসী, লুটেরা, বিচারের বাইরে। আর তারা সরকারি দলের হলে তো কথা নেই। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। বিচার পাচ্ছে না।

“আমরা যদিও ছাঁটাই প্রস্তাব করেছি। কিন্তু এই বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য, সত্যিকার ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যদি আরও টাকার প্রয়োজন হয়, সেই অর্থ দাবি করা হলে আমরা সংসদ থেকে অবশ্যই তা পাস করব।”

সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নান বলেন,“ একজন জন বিচারপতির ওপর ৫ থেকে ১০ হাজার মামলার দায়িত্ব পড়েছে। এই মামলার জট কমাতে হবে। বিচারপতি নিয়োগ নিতে হবে।”

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, “আইনমন্ত্রী ভদ্র মানুষ। এ জন্য ভদ্রতার খাতিরে তিনি অল্প দাবি করেছেন। এই মন্ত্রণালয়ের অনেক অর্থের প্রয়োজন। আদালতে বিচারকদের চেম্বার নেই। এজলাস ভাগ করে বিচারপতিরা বসেন। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা নেই।”

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “আইনমন্ত্রী একজন দক্ষ মানুষ। উনি টাকা চাইতে কম চেয়েছেন কেন? এই রিমাইন্ডার দেওয়ার জন্য ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছি। এটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ছাঁটাই প্রস্তাব।

“দেশে মামলার জট। এই জট কমাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য আমাদের টাকা দিতে আপত্তি নেই। আমরা টাকা দিতে চাই। আপনি টাকা নেন।”

সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “হ্যাঁ, আমি ভদ্র লোক। এটার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা চেয়েছি। উনারা বলেন, এক হাজার দেন। আমি দুই হাজার কোটি টাকা চাইলে তো উনারা হার্টফেল করতেন।

“সেই জন্য আমি আস্তে আস্তে চাচ্ছি। আমি কাজ দেখিয়ে অর্থমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে চাই এবং সেটা নিয়ে যেতে চাই।”

জমে থাকা মামলা ৩২ লাখের মতো জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা লিগ্যাল এইড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলা যাতে কম হয় সেই উদ্যোগ নিয়েছি। এই কার্যক্রম চলছে। আমাদের আরও কিছু পদক্ষেপ রয়েছে। তবে, করোনাভাইরাসের কারণে কিছু কাজ শুরু করা যায়নি।”

“আগামী বছর যখন দেখবেন আমি আরও বেশি টাকা চেয়েছি। তখন যেন আপনারা হার্টফেল না করেন,” রসিকতাচ্ছলে বলেন আনিসুল হক।