‘সরকারের ভেতরের একটি গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে’ সরকার পাটকলগুলো বন্ধের পথে হাঁটছে বলে অভিযোগ করেছে জাসদ। এই সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে আসার দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
বিজেএমসির অধীনে থাকা ২৫টি পাটকলে লোকসান চলছে বহু বছর ধরে। প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছিল সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে। এমন অবস্থায় এই পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে পুনরায় চালু করা হবে পাটকলগুলো।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার বিকালে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় জাসদ। অপরদিকে এর প্রতিবাদে রোববার সকালে রাজধানীর মতিঝিলে বিজেএমসি কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
“প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে পাটের জিন বিন্যাস আবিষ্কার হয়েছে ও প্রধানমন্ত্রী যখন পাটের পুনর্জাগরণের কথা বলছেন তখন পাটকল ও পাটশিল্প ধ্বংসের জন্য অন্তর্ঘাত চালানো হচ্ছে।”
জাসদ নেতারা পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন, পাট ক্রয়ে দুর্নীতি বন্ধ, পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ করা, পণ্যের মোড়কে পাট ব্যবহার আইন ২০১০ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতাসহ অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুইটির টাকা পরিশোধ করার দাবি জানান।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোববার সকাল ১১টায় বিজেএমসি কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
শনিবার বিকালে বাম জোটের এক অনলাইন আলোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত আসে বলে গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ জানিয়েছেন।
এদিকে শনিবার সকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতীকী অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট।
নেতারা অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাসের দুর্যোগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৫টি পাটকল বন্ধ করে স্থায়ী, অস্থায়ী, বদলিসহ প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষকে বেকারত্ব আর অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার ‘অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ সরকার।
পাটকলগুলোর লোকসানের কারণ অনুসন্ধানে নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তারা।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সংস্কারবিহীন পুরাতন যন্ত্রপাতি, মাথাভারী প্রশাসন, পাট ক্রয়ে এবং ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি, বিজেএমসির সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা ও অদক্ষতাই রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোর লোকসানের কারণ।
“রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ বন্ধ করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে পরিচালনার পরিকল্পনা মূলত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুট করে বেসরকারি পাটকল মালিকদের লাভবান করতে সুবিধাভোগী আমলাদের কৌশল। পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রমাণ করে যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে ব্যক্তি খাতকে সমৃদ্ধ করার নীতিতে রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।”