জনপ্রতিনিধিরা সক্রিয় ছিলেন বলেই খাদ্যের অভাব হয়নি: হানিফ

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখায় দেশের কোথাও ‘খাদ্যের অভাব হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2020, 06:45 AM
Updated : 3 June 2020, 11:19 AM

মঙ্গলবার রাতে ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানের চতুর্থ পর্বে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত মানুষের পাশে আছে।

“আমরা খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কৃষকের ধানকাটা থেকে শুরু করে হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। কর্মহীন ও অসহায় মানুষের পাশে থেকে দলীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রেখেছেন, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। আর এ কারণেই কারণে দেশের কোথাও খাদ্যের অভাব হয়নি।”

ইন্টারনেটে সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠানের এবারের পর্বের বিষয়বস্তু ছিল ‘করোনা সঙ্কটে জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলি ফরহাদ।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আলোচনায় যুক্ত হন।

আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এই মহামারী মোকাবিলায় কী ভূমিকা রখাছে তা নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেন হানিফ।  

তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্যরা এমনকি আমাদের দলীয় নেতৃবৃন্দ, জেলা ও থানা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ আমাদের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ সকলেই কিন্তু আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এই দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।”

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, সরকারি ত্রাণের বাইরে তাদের দলীয় সাংসদ সদস্য, উপচেজলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছেন।

“নগদ টাকা দিয়েছেন প্রায় নয় কোটি, যা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এটা সরকারের সহায়তার বাইরে।”

ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের যেসব জনপ্রতিনিধির নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল আলোচনায়।

এর উত্তরে কামাল হোসেন বলেন, দেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন ৬১ হাজার ৫৭৯ জন।

“এ পর্যন্ত ৭২ জন জনপ্রতিনিধি অনিয়ম করেছেন, যা ০.১৩ শতাংশ। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে তাদেরকে নিজ নিজ দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির পাশাপশি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা এই অসৎ কাজগুলো করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পাশাপাশি দল ব্যবস্থা নিয়েছে।”

এ বিষয়ে আলোচনায় যোগ দিয়ে জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, প্রান্তিকের অনিয়মের খবর যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হয়, তখন বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

“নরসিংদীর এক মেম্বারের মামলার খবর যখন সাধারণ মানুষ শেয়ার করছে, তখন মনে হয় নরসিংদী জেলায় বিরাট চুরি হয়ে গেছে। বিষয়টা কিন্তু তা না। অ্যাকশন–রিঅ্যাকশনগুলো চিন্তাভাবনা করার ব্যাপার আছে।”

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি ইশতিয়াক রেজা তৃণমূলে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন একটি সংসদীয় কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন এই আলোচনা সভায়।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের কাজ করার সুযোগ থাকে ‘খুব কম’; সেখানে স্থানীয় আমলাতন্ত্রের ‘একটি বড় যোগাযোগ’ থাকে। সংসদ সদস্যের অধীনে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করে দিলে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার সুযোগ বাড়বে।

“আজকে যখন ত্রাণ কার্যক্রম মনিটর করার জন্য ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, এটা কি কোনো বার্তা? সাধারণ মনে জিজ্ঞাসা তৈরি করে, জনপ্রতিনিধিদের ভাবনা তৈরি করে।”

ইশতিয়াক রেজার এ প্রশ্নের উত্তর দেন রাজশাহী-৬ (বাঘা –চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, সচিবদের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের কাজের সঙ্গে ‘মোটেই সাংঘর্ষিক নয়’।

“আমি দুটো উপজেলার প্রতিনিধিত্ব করি। রাজশাহীতে আরও ৫ জন সাংসদ আছেন, তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধান রয়েছে। আমি মনে করি এটা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “যখন সরকারি গোডাউন থেকে ত্রাণ আসবে বা যাবে, এটি কিন্তু আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ডিসি, ইউএনও, সচিবের মাধ্যমে তদারকি করা শ্রেয় ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন। এমন কোনো কাঠামো নেই, যেখানে ত্রাণ জনপ্রতিনিধি ছাড়া গ্রহীতার ঘরে পৌঁছাতে পারবে।”

শাহরিয়ার আলম বলেন, “উপজেলা ও ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধি এবং তাদের সহযোগীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক কাঠামোর সমন্বয় না হলে কার্যক্রম সফল হত না।”

ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে যাদের বিরুদ্ধে, তাদের মধ্যে অনেকে ‘নিজের টাকায় ত্রাণের চাল’ এনেও অভিযোগে ‘ফেঁসেছেন’ বলে দাবি করেন রাজশাহীর এই এমপি।

তিনি বলেন, “তাদের কাজ কতটা কঠিন! একজন জনপ্রতিনিধির কাছে ২০ জনের চাল বরাদ্দ দেওয়া হল, যারা গড়ে পাবেন ২০ কেজি চাল। কিন্তু তার বাড়িতে এসেছে ৫০ জন। তিনি দশজনের হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে নিয়ে ৪০ জনকে বাকি চাল ভাগ করে দিলেন। কিন্তু যাদের ভাগে কম পড়েছে, তাদের অভিযোগে কিন্তু সে বেচারা সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়ে গেছেন।”

শাহরিয়ার আলম বলেন, “নিজের পয়সা দিয়ে ত্রাণ দিতে চাল কিনে নিয়ে আসলাম, সেই চালকে সরকারি ঘোষণা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল। তারা দুয়েকজন আত্মহত্যা করেননি, অবাক করার মত।… তখন যে অভিযোগগুলো এসেছিল, তা একেবারেই প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”

সরকারিভাবে রিপোর্ট যাই আসুক, প্রতিটি ঘটনার গভীরে গিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে তারপর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন তিনি।  

ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমকে ‘বিতর্কিত করার অপচেষ্টা’ চলছে বলেও অভিযোগ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এই আলোচনায় অংশ নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রতি সদয় হতে আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন