জিয়ার আদর্শ এখনও জনপ্রিয়: ফখরুল

করোনাভাইরাস মহামারী কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে নিয়েই ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্রের মুক্তির’ প্রত্যাশা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2020, 02:26 PM
Updated : 30 May 2020, 02:36 PM

শনিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি বলেন, “একেকটা এই ধরনের মহামারীর পরে পরিবর্তন আসে, যুগের পরিবর্তন হয়, সভ্যতার পরিবর্তন হয়ে যায়। আসুন আজকে আমরা সবাই মিলে এই পরিবর্তনকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাই।”

“গণতন্ত্রের মুক্তি হোক এবং মানুষের মুক্তি হোক। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাক এবং পরিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ মুক্তি পাক- এই হল আজকে আমাদের অঙ্গীকার।”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল এই আলোচনা হয়। বিকাল সাড়ে তিনটায় আলোচনা শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৫টায়।

নেতারা জানান, গুলশানে ‘ফিরোজা’য় দলের চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়া ও লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা শোনেন।

জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “জিয়াউর রহমান সাহেবের সবচেয়ে বড় অবদান তিনি এই জাতিকে একটি স্বাতন্ত্র দিয়েছিলেন, একটি পরিচয় দিয়েছিলেন। সেজন্য যখন তিনি শাহাদাত বরণ করলেন, তার জানাজায় লক্ষ লক্ষ ক্রন্দনরত মানুষের সামনে ইমাম সাহেব আল্লাহর দরবারে হাত তুলে এই কথা প্রার্থনা করলেন যে, আল্লাহ বাংলাদেশকে হেফাজত করুন।

“তখন সেই লক্ষ লক্ষ মানুষ ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে বাংলাদেশ ও জিয়াউর রহমান একাকার হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে জিয়া, জিয়ার দর্শন, জিয়ার ধানের শীষ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজও এতো প্রিয়।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “অতীতে যে কটা নির্বাচন প্রত্যেকটাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারি দল, যারা এখন দেশ পরিচালনা করছে তারা বুঝতে পেরেছে জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে। এজন্য জনগণকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়নি তারা।

“আজকে করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে কাবু করে ফেলেছে। এই ধরনের মহামারীর পরে রাজনৈতিক-সামাজিক এবং বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। আমি প্রত্যাশা করব এই পরিবর্তনে যাতে করে বাংলাদেশে সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, যাতে করে অর্থনৈতিক মুক্তি, যার জন্য জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, যাতে করে সামাজিক যে দুরাবস্থা, যে লুটেরা ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে সেসব দূর হয়। সেজন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা আছেন তাদের প্রতি আমরা আহ্বান আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকেন।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ মুক্তিযদ্ধের ওপর লেখা বিভিন্ন বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আজকে এটা নিয়ে যারা বির্তক করছেন তারা বির্তকের খাতিরে বির্তক করছেন। এই বির্তক তুলে শহীদ জিয়াকে খাটো করা যাবে না, তাকে খাটো করে কোনো লাভ হবে না।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মনে হয় এমন একটা বিশাল অপরাধ করে ফেলেছেন যে, আওয়ামী লীগের কিছু ছিনতাই করে নিয়েছেন।

“তিনি দেশের মানুষের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেটা তারা (আওয়ামী লীগ) ভোলানোর জন্য কত কথা কতভাবে বলছেন। টেলিভিশন সব দখল করে ফেলেছেন আপনারা। আজ সেই টেলিভিশনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে একটা শব্দও উচ্চারণ করা হচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “এটা জাতির দুর্ভাগ্য। যে জাতি বীরকে সন্মান দেয় না, সেই জাতিতে বীর জন্মায় না, যে জাতি চোরকে সন্মান দেয় সেই জাতিতে চোর জন্মায়।আমরা প্রমাণ দেখলাম গত কয়েকদিনে। দেখলাম বিদেশ থেকে আসলো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, স্পেশাল প্লেন। অর্থাৎ চোরের কদর করছেন খুব ভালো করে। দেশের মানুষের জন্য নিজ দেশে আসা-যাওয়া বন্ধ, কিন্তু বিশেষ শ্রেণি বিদেশে যাওয়া-আসা কোনো কিছু বন্ধ নাই।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। তিনি মাইলের পর মাইল জমির আল দিয়ে হেঁটে মানুষের কাছে গেছেন। তখন অন্যান্য রাজনীতিবিদরা ঘরে বসে থেকে রাজনীতি করার সুযোগটা হারিয়ে ফেলেছেন।”

মির্জা ফখরুলের পরিচালনায় আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।