বিএনপিকে দায়িত্বশীল দল হিসেবে দেখেনি জনগণ: কাদের

করোনাভাইরাস সংকটে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির কোনো দায়িত্ব আছে কিনা সেই প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2020, 01:57 PM
Updated : 27 May 2020, 01:57 PM

নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ‘সাধারণ ছুটি’র সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের পর বুধবার বিকালে নিজের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।

দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করাটা সরকারের বড় ধরনের ভুল।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “সরকার অর্থনৈতিক লোকসানের কথা জেনেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থনৈতিক স্থিতি ও ক্ষতি পুষিয়ে জনগণের কল্যাণে কয়েক স্তরে ঘোষণা করেছে প্রণোদনা প্যাকেজ। সাধারণ ছুটি বা লকডাউন যে নামেই বলা হোক, এর উদ্দেশ্য হল শারীরিক তথা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা।

“সরকার জনগণের সচেতনতার দূর্গ গড়ে তোলাকে দুর্যোগ মোকাবিলার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করলেও মির্জা ফখরুল সাহেব সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম মিথ্যাচার করছেন। বিএনপি রাজনৈতিকভাবেই আজ লকডাউনে আটকে রয়েছে। তারা সরকারের কোনো ইতিবাচক প্রয়াস খুঁজে পান না।”

মহামারী রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করে সরকার, যা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। ছুটির এসময় অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন বন্ধ করে মানুষজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়। সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন বিধিও মানার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে সাধারণ ছুটি আর না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খোলা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “দেশের জনগণ ভালো করেই জানেন, আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতারা সব সময় ঝাঁঝালো কিছু শব্দ চাতুর্যের মাধ্যমে প্রয়োগ করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। মির্জা ফখরুল সাহেব সমন্বয়হীনতার কথা বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন- তা স্পষ্ট না করে বরাবরের মত কথামালার চাতুরি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন।

“বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা ও মানবিক প্রয়াস দেশবাসীর জানা। অতীতে দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে শেখ হাসিনা ও তার দল মানুষের পাশে সবার আগে দাঁড়িয়েছে। সরকারে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় যে সক্ষমতা দেখিয়েছে তা অতীতে ও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত। করোনা সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ ও অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার দক্ষতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ ও আক্রান্তদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে।”

তিনি বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো করোনা তহবিল গঠন, হেল্প লাইন চালুসহ নানান উদ্যোগ নিয়েছে। এসবের কোনোটাই বিএনপি করতে পারেনি। তবে কি দেশের জনগণের প্রতি বিএনপির কোনো দায়িত্ব নেই?”

বিএনপির রাজনীতি ‘আইসোলেশনে’ চলে গেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যে কোনো দুর্যোগে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করাই বিএনপির রাজনীতি। অসহায় জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমে কথামালার ফুলঝুড়ি বর্ষণই তাদের জননন্দিত হাতিয়ার। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে কর্মহীন মানুষের জন্য এবং ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তাদেরকে দেশের জনগণ দেখেনি। তারা রাজনীতির আইসোলেশনে ছিল এবং আছে।

“লকডাউনের নামে দেশ ও জনগণের জীবনকে স্তব্ধ করার পাশাপাশি জীবিকা রুদ্ধ করে অর্থনৈতিক স্থবিরতা সৃষ্টির অপকৌশলই তাদের মনের কথা। শেখ হাসিনা সরকার দক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনা করেই জীবন ও জীবিকার সাথে ভারসাম্য তৈরি করার চেষ্টা করছে।”

করোনাভাইরাস শনাক্তে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিট নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “আমরা আগেই বলেছি সরকার করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার ঘোষিত নীতি অনুসরণ করছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় র‌্যাপিড টেস্ট কিটের ব্যবহার বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয়। তবুও সরকার জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত কিট পরীক্ষণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

“আপনারা জানেন কিট অনুমোদনের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি। সে পদ্ধতি অনুসরণের জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, যা উদ্ভাবক ডা. বিজন শীল মিডিয়ায় বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের উদ্যোগ ও সহযোগিতার প্রসংশা করেছেন। সরকার স্বাস্থ্য খাতসহ যেকোনো খাতে জনহিতকর গবেষণা এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে, স্বাগত জানায়।”

অন্ধাকার শেষে আশার আলো আসবে প্রত্যাশা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “অন্ধকার সুড়ঙ্গ দেখে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, সুড়ঙ্গ শেষেই রয়েছে আশার আলো। আমি সকলকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানাচ্ছি। আহ্বান জানাচ্ছি কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার।”