‘পাশের মানুষটির খবর নিন’, আহ্বান ভার্চুয়াল আলোচনায়

করোনাভাইরাস সঙ্কট জয় করতে যার যার এলাকার সাধারণ মানুষের খোঁজ রেখে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান এসেছে আওয়ামী লীগের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2020, 05:01 AM
Updated : 20 May 2020, 11:09 AM

মহামারী ও পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা আশা প্রকাশ করেন, তাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দূরদর্শী নেতৃত্বে’ ঠিকই করোনাভাইরাস সঙ্কট ‘জয় করবে’ বাংলাদেশ।

ইন্টারনেটে সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠানের এবারের পর্বের বিষয়বস্তু ছিল ‘করোনাভাইরাস সংকটে মানবিক সহায়তা’। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলি ফরহাদ।

ভিডিও কলে আলোচনায় যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির শুরু থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদক্ষ হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে সরকার।

পাঁচ কোটির বেশি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা এবং ৫০ লাখ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। মনোবল শক্ত রেখে এই সঙ্কট দেশের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে।

“আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের বলছি, পাশের লোকের খবর রাখুন। অনেকে কষ্টে আছে, ছিন্নমূল মানুষ আছে, তাদের পাশে দাঁড়ান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সঙ্কট জয় করব ইনশাল্লাহ।”

করোনাভাইরাসের মহামারীতে দেশে-বিদেশে যারা মারা গেছেন, তাদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি শোকসন্তত পরিবারে প্রতি সমবেদনা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

প্যানেল আলোচনায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সুতরাং এই জায়গাটি নিয়ে আমাদের বড় চিন্তায় পড়তে হচ্ছে না, যেখানে অনেক দেশেরই চিন্তায় পড়তে হচ্ছে কিংবা হবে।

“কৃষিতে শেখ হাসিনা সরকার ভর্তুকি সবসময়ই দিয়ে আসছেন। এখন এর সীমা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মত একটি দেশে সহায়তা বা প্রণোদনা ব্যপকভাবে দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনার মত দূরদর্শী নেতা আছেন বলেই এইভাবে মানুষের কল্যাণে সরকার দাঁড়িয়েছে।“

করোনাভাইরাস সঙ্কটে রপ্তানি আয় থেকে শুরু করে রেমিটেন্স- অর্থনীতির সব সূচকেই যখন ধস, তখন এ সঙ্কট থেকে উত্তরণে কতদিন লাগতে পারে- এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি বলেন, “দেখুন, সরকার তার সাধ্যমত চেষ্টা করছে এবং সরকারের আগামী ছয় মাসের একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা আছে, যা এপ্রিল থেকে বা মে থেকে শুরু হয়েছে।

“এরপরেও এই সঙ্কট কতদিন চলবে আমরা কেউ বলতে পারছি না। ইভেন সারা বিশ্বে কেউ বলতে পারছে না। একইসঙ্গে আমাদের যেমন এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে, তেমনি নিরাপত্তার দিক, স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিক বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতিকে একটা সুস্থতার জায়গায় রাখতে হবে। সেই সিদ্ধান্তগুলো অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সরকার করছে।”

দীপু মনি বলেন, “শুধু সরকার নয়, আমাদের জনগণকেও, যেমন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি বিশেষ... আমরা যেন সমাজের একজন আরেক জনের পাশে দাঁড়াই। সরকারের পাশাপশি আমাদের যার যতটুকু আছে, আমরা আমাদের পাশের মানুষটির পাশে দাঁড়াব।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “এই ধরনের একটি যুদ্ধে অপতথ্যেরও সমাহার আছে, যার দুটি কারণ। একটি হচ্ছে, কেউ তথ্যের অভাবে অপতথ্য প্রচার করে। আরেকটি হচ্ছে রাজনৈতিক।”

তিনি প্রশ্ন করেন- “দেশের বাইরে থেকে এসে করোনায় কেউ মারা গেলে এর দায় সরকারে নিতে হবে, একটি রাজনৈতিক দলের স্টেটমেন্ট এমন কীভাবে হতে পারে? এর দায় সরকারের উপর কীভাবে পড়ে? একটি যুদ্ধের মধ্যে সরকার অবশ্যই পাশে আছে।”

বুলবুল বলেন, “তথ্য ও অপতথ্যের লড়াই অছে। আমি মনে করি সরকারের দিকে অনেক তথ্য আছে। তবে দলের তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সরকারই সব করছে, এখানে দলের কোনো অবদান নেই। দলের অবস্থানের কথা প্রকাশ করা দরকার। তবে বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যমগুলো সরকারের পাশে আছে।”

রাত ১০টা থেকে দুই ঘণ্টার এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি শিপ্রা দাশ প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে আলোচনায় যোগ দেন।