বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর চায় আ. লীগ

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্য আবদুল মাজেদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2020, 11:47 AM
Updated : 8 April 2020, 12:01 PM

বুধবার দুপুরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, “দেশের সংবিধান ও প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী ফাঁসির রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ফাঁসির রায় কার্যকর করার কথা আইনে উল্লেখ আছে।

“বাংলাদেশের সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইনের সকল বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় প্রদান করা হয়েছিল। বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ফাঁসির রায় হাই কোর্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেলে সুপ্রিম কোর্ট ফাঁসির রায় বহাল রাখে।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, আসামি পক্ষের উপস্থিতিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন বিচারের সর্বোচ্চ পর্যায় পার হওয়ার পরও খুনিদের ফাঁসির রায় বহাল আছে।

“ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য আইনসঙ্গত ভাবে যা করার সেটা শুরু হয়ে গেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরএর পক্ষ থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।”

বঙ্গবন্ধুর খুন ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে পলাতক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকেমঙ্গলবার ভোরে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আদালতের আদেশে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রাখা হয়।

মাজেদকে বুধবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার পর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী তার মৃত্যু পরোয়ানাও জারি করেছেন।

এখন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আরো পাঁচ দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনী- রাশেদ চৌধুরী, নুর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, কর্ণেল রশিদ ও মুসলেহউদ্দিন রিসালদাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে জোরদার প্রচেষ্টার দাবি জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে এই জাতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা হয়। পৈশাচিক ও নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় নি, একটি দল ও তার আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করা হয় নি বরং একটি সদ্য স্বাধীন জাতি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে গলা টিপে হত্যা করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল।”

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মতলবি মহলের ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

এাড়া বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি বিভিন্ন সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন এবং সচেতন জনগণের প্রতি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

নির্দেশনাসমূহ হলো- 

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীগণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে চলে সারাদেশের জনগণের মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্পর্কিত গণসচেতনতা সৃষ্টি করবেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সঠিক তথ্য প্রদান করে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন এবং জনসমাগম হতে পারে এমন কর্মসূচি পরিহার করবেন।

কোভিড-১৯ টেস্ট কিট ব্যবহারের জন্য ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন ও টেকনিক্যাল টিম কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল দ্রুততম সময়ে করোনা ভাইরাস টেস্ট করার কিট আবিষ্কৃত হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কিটে প্রাপ্ত ফলাফল শতভাগ সঠিক না হওয়ায় ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন ও টেকনিক্যাল টিম সেটা অনুমোদন দেয় নি। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবেন এবং জনগণকে সচেতন করবেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাস টেস্টের পরিসর বিভাগীয় সদর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা সেবা প্রার্থীর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য যথাসাধ্য সহযোগিতা করবেন।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক নির্দেশনা প্রদান করেছে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয় নি। জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা চিন্তা করে নির্দিষ্ট  সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আমাদের পেশাদারী ও দায়িত্বশীল প্রশাসনের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী মাঠে তৎপর রয়েছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য নিজেরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন এবং সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনগণকে তা বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করবেন। সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে মানুষের মনে সৃষ্ট আতঙ্ক দূর করবেন এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির অভিভাবক হিসেবে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া, সারাদেশে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ ও তা আরও জোরদার করা, গরীব-দুস্থ অসহায় মানুষের মাঝে ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার বিতরণ, গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা ও গুজবে কান না দেওয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এগুলো মেনে চলবেন এবং জনগণকে মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করবেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে খোলা বাজারে ওএমএস পদ্ধতিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল ও আটা বিক্রি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে ট্রাকে করে সুলভমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল উপজেলাতে সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা ও শিশু খাদ্য প্রদান করা হচ্ছে। এ সকল কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সকল স্তরের জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্থানীয় প্রশাসনকে এই সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় পর্যায়ে গরীব-অসহায়-দুস্থদের তালিকা প্রণয়ন করে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম ও শহর পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই তালিকা প্রস্তুতিতে ও এই কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য তথা দেশের প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তিনি বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবেলার জন্য নিরলসভাবে  সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে চলেছেন। দেশবাসীর সম্মিলিত সচেতনতা, সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি পালনই পারে ভয়াবহ এই সংকট থেকে আমাদের রক্ষা করতে। বাংলাদেশ তথা বিশ^বাসীর এই ক্রান্তিলগ্নে সকলকে ধৈর্য্য, সতর্কতা, দায়িত্বশীলতা, মানবিকতা ও দেশপ্রেমের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। পরম করুণাময় আমাদের সহায় হোন।