প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক প্যাকেজ ‘না বুঝেই’ ফখরুলের প্রতিক্রিয়া: তথ্যমন্ত্রী

নভেল কারোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অর্থনৈতিক প্যাকেজ ‘না বুঝেই’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2020, 12:22 PM
Updated : 6 April 2020, 12:41 PM

সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য রেখেছেন, এতে মনে হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সেটা না পড়ে না বুঝে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আমরা আশা করেছিলাম, আগের দিন যেহেতু বিএনপি একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে এবং পরদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি যুগান্তকারী অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন যেখানে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন। এই অর্থনৈতিক প্যাকেজ বাংলাদেশের জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ অথচ ভারত যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা ভারতের জিডিপির দশমিক ৮ শতাংশ।

“আমরা আশা করেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অর্থনৈতিক পাকেজ ঘোষণার পর তারা সরকারকে ধন্যবাদ জানাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ধন্যবাদ জানানোর সংস্কৃতিটাই লালন করে না। সে কারণে বিএনপি এবারও চিরাচরিত গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ব্ক্তব্য রেখেছেন তাতে মনে হয় তিনি না পড়ে না বুঝে একটি বক্তব্য দিয়ে দিয়েছেন। তিনি জেনেও না জানার ভান করছেন।

“এই প্যাকেজ ঘোষণার আগে থেকেই সরকার দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এখানে দরিদ্র মানুষের কোনো কথা নেই, এখানে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের কোনো কথা নেই। এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কথা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন। এই সংবাদ সম্মেলন করার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জানা উচিৎ ছিল, বিএনপির মতো একটি বড় দলের মহাসচিবের মতো দায়িত্বে থেকে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে বক্তব্য রাখা।”

করোনাভাইরাস সংকটে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, “সরকারের চলমান ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ডের বাইরেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দরিদ্র মানুষ যাতে বিনামূল্যে খাদ্য পায় সেজন্যই সরকার ৪৮ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন চাল ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগদ বরাদ্দ হিসেবে ১৬ কেটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

“গতকাল যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে সেখানেও ৩০-৪০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়ার জন্য ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৪ টাকা দামের ওএমএসের চাল ১০ টাকা দরে ঢাকাসহ উপজেলাগুলোতে দেওয়া হয়েছে, যাতে দরিদ্র মানুষ এটা কিনতে পারে। এবং এটি কিনে মানুষ যে সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছে, স্বস্তি প্রকাশ করেছে এটা আপনারা বিভিন্ন গণমাধ্যমেই দেখেছেন।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার ৫০ লাখ পরিবারকে গত সাত মাস ধরে প্রতি পরিবারকে ৩০ কেজি করে ১০ টাকা দরের চাল বিতরণ করছে। প্রায় আড়াই কোটি মানুষের মাঝে এই সহায়তা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক এই প্যাকেজে কৃষকের জন্যও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৎস্য, পল্ট্রি- তাদের ক্ষতি পোষাতেও এই অর্থনৈতিক প্যাকেজে বলা হয়েছে। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেছেন, এই সমস্ত খাতে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয় নাই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চোখ ও কান অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করছে।

“স্বাস্থ্য খাতের বিষয় নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলেছেন। স্বাস্থ্য খাতে চলতি বাজেটে ২৫ হাজার ৫৮০ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্যাকেজ ঘোষণার আগেই যাতে পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেগুলো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হয়ত জেনেও না জানার ভান করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি পিপিই বিতরণ করেছে।”

বিএনপিকে ‘দোষারোপ করার রাজনীতি’ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “দোষারোপ করার যে সংস্কৃতি তারা লালন করেন, এই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে, আজকে বিশ্ব দুর্যোগের সময় জাতীয় দুর্যোগের সময়ও তারা বাদানুবাদের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।

“সরকার নাকি জনগণকে ঘরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এমন কথাও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫শে মার্চ জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন সেই ভাষণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ কার্যত ঘরেই আছে, ঘরেই অবস্থান করছে। এরপরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণের জন্য ৩১দফা নির্দেশনা মানার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। জনগণ সেটিও পালন করার, অনুসরণ করার চেষ্টা করছে।

“সমগ্র দেশের মানুষ যেখানে ঘরে অবস্থান করছে, আমরা দেখতে পেলাম খালেদা জিয়া যেদিন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পেলেন তারা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সামনে হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করলেন, বাড়ির সামনে জমায়েত করলেন। যারা এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেন। যেখানে ২৬শে মার্চের জাতীয় সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে যখন জাতীয় সৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন বাতিল করা হয়েছে অথচ খালেদা জিয়ার এখানে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত করেন, নিজেরা ঘরে থাকেন না তারা।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগ সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এখন একে অপরকে দোষারোপের সময় নয়। একে অপরের হাত ধরে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়।”