রাজনীতিবিদদের কাজ চলছে ফোনে, ভিডিও কলে

করোনাভাইরাস আতঙ্কে সরকারি ছুটি ও চলাচলে বিধি-নিষেধের বেড়াজালে রাজনৈতিক দলের নেতারাও ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। তবে কাজ থেমে নেই তাদের, ফোনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সকেও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম করে নিয়েছেন তারা।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2020, 10:32 AM
Updated : 31 March 2020, 11:14 AM

আবার কেউ কেউ অফুরন্ত অবসরের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন টেলিভিশন দেখা ও বই পড়াকে। মাঝেমধ্যে বেরিয়ে দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিচ্ছেন।

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তার দাপ্তরিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ প্রায় পুরোটাই করছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজনৈতিক যোগাযোগ আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে করছি। ভিডিও কনফারেন্সটাই এখন বেশি হচ্ছে। দলীয় যেসব কাজের নির্দেশনা সেগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে মনিটর করা হচ্ছে।

“আর মন্ত্রণালয়ের কাজ, আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) করেছি। সে অনুসারে কাজ চলছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে আপডেট নেওয়া হচ্ছে। সচিব পুরোটা সমন্বয় করছেন।”

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে প্রান্তিক জনগণের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধা দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ।

দিনাজপুর-২ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, “আগে এলাকার মানুষদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা বা কথা বলা হত। এখন সেটা হচ্ছে না। এরমধ্যে একটা বিষয় হচ্ছে- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সুবিধাগুলো একদম প্রান্তিক মানুষ ব্যবহার করতে পারছে।

“আমার এলাকার এক ভোটার সেদিন ফেইসবুক  মেসেঞ্জারে আমাকে নক করে বলল, আপনার ভিডিওটা অন করেন। একটি পরিবারের সাথে আমার কথা হল। তাদের ছোট শিশুটি বলছে, মন্ত্রীর সাথে কথা বলবে। এখন আরও বেশি মানুষকে অ্যাটেন্ড করতে হচ্ছে।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি ছুটিতে মানুষ না বেরোনোয় ফাঁকা রাস্তার এই চিত্র সারা দেশেই; রাজনৈতিক নেতারাও ঘরে বসেই সারছেন জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কাজ

বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ জন। এতে পাঁচজনের মৃত্যু সংখ্যার বিচারে কম হলেও আতঙ্ক কম ছড়ায়নি।

ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার রোধে অন্য দেশগুলোর মতোই লম্বা ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার; ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এই ছুটি, এই সময় সবাইকে বলা হয়েছে সংক্রমণ এড়াতে ঘরে থাকতে। সেই সঙ্গে সড়ক, নৌ, আকাশ পথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রেখে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলা হয়।

এর আগে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ১৭ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।

সাধারণ ছুটির ঘোষণা আসার পর ২৪ মার্চ আরেক ঘোষণায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। মঙ্গলবার এক ঘোষণায় সাধারণ ছুটিও ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে মানুষের ঘরবন্দি হয়ে পড়ার এই সময়ে ২৫ মাস পর দলীয় কার্যালয় ছেড়ে ঘরে গিয়ে অনেকটা একাকী জীবনযাপন করতে হচ্ছে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি শ্যামলীতে ভাড়া বাসায় আছি। কোয়ারেন্টিনেই আছি। তারপরও দলের নেতাকর্মীদের সাথে মোবাইলে কথা বলছি। বাসায় অন্য যারা আছে তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলি।

“বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি। মোবাইলে যোগাযোগ রাখছি। টেলিভিশন এখন অন্যতম সঙ্গী। গতকাল দুঃস্থ ও ঘরবন্দি মানুষের মধ্যে খাবার দিতে দলীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। এভাবেই সময় কাটছে।”

জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য। তারও কাজ চলছে ফোনে।

তিনি বলেন, “মূলত ফোনেই এখন রাজনৈতিক যোগাযোগ করতে হচ্ছে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এখন কিছু করা যায় না। এলাকায় আগে ঘুরতাম, এখন সম্ভব নয়। কোনো সমস্যা হলে নির্দিষ্ট একজনকে পাঠিয়ে দেই। সে সুরক্ষিত হয়ে যায়।”

মাহবুব-উল আলম হানিফ (ফাইল ছবি)

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সাথে ডিজিটালি যোগাযোগ করা হচ্ছে। এলাকায় যদি যাই তাহলে অনেকে জড়ো হবে। সেটা ঠিক হবে না। এজন্য ঢাকায় বসেই ভিডিও কনফারেন্স করেই যোগাযোগ করছি।”

আব্দুর রহমান (ফাইল ছবি)

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বাইরে বের হচ্ছি না, ঘরে বসেই ফোনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”