নেত্রী মুক্ত, ২৫ মাস পর রিজভীও ফিরলেন বাড়ি

সাজাপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির একদিন পরই নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়লেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2020, 11:15 AM
Updated : 26 March 2020, 11:17 AM

বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে শ্যামলীর আদাবরে ঢাকা হাউজিং সোসাইটির ভাড়া বাসায় যান রিজভী।

পঁচিশ মাসের বেশি সময় এই কার‌্যালয়ে অবস্থান করেই দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন তিনি।

রিজভী জানান, বাসায় গেলেও প্রতিদিন তিনি কার্যালয়ে আসবেন। শুধু রাতে থাকা আর সেভাবে হবে না।

নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভী তৃতীয় তলার একটি ছোট্ট কক্ষে থাকতেন। এই দীর্ঘ সময়কালে যেসব বইপত্র তার সঙ্গী ছিল সেসব কয়েকটি বস্তায় ভরে নিজের ছোট গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

অফিসকর্মী রফিকুল ইসলাম ও শামীম হোসেনও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বিদায় জানান।

দুই বছরের বেশি সময় পর নয়া পল্টনের কার্যালয় ছাড়েন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

রিজভী কার্যালয়ের প্রধান ফটকে নিরাপত্তা কর্মীসহ অফিস কর্মকর্তা-কর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করে বিদায় নেন।

যাওয়ার আগে দীর্ঘ সময় পরিবার-পরিজন ছেড়ে কার্যালয়ে অবস্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রিজভী বলেন, “আমি ৭৮৭ দিন পার্টি অফিসে অবস্থান করেছি, যখন খুবই একটি রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার এমন একটা পর্যায়ে যায় যে, আমি এই কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড এখানে শুরু করলাম। এরপরে আপনারা দেখেছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি এদেশের কোটি কোটি মানুষের সমাদৃত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হল।

“আমার একটা ব্রত ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমি দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করব এবং সারাদেশের নেতা-কর্মীরা যেন তাদের রাজনৈতিক কোনো কাজের জন্য দলীয় কার্যালয়ে এসে বিমুখ না হয়, কোনো নেতাকে পেলো না-এরকম পরিস্থিতি যেন না হয়। সব কিছু বিবেচনা নিয়েই আমি এখানে অবস্থান করেছি। যে ব্রত ছিলও দেশনেত্রীর মুক্তির পরে আমি বাসায় ফিরব, গতকাল তার মুক্তি হয়েছে। সেজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আজকে বাসায় ফিরে যাব।”

দুই বছরের বেশি সময় পর নয়া পল্টনের কার্যালয় ছাড়েন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। ২৫ মাস পর ‘মানবিক বিবেচনা’ সরকারের নির্বাহী আদেশে বুধবার মুক্তি পান তিনি। কারাবাসের এই সময়ের মধ্যে একবছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা। মুক্তিলাভের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকেই গুলশানের বাসায় ফেরেন বিএনপি প্রধান।  

২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন রুহুল কবির রিজভী। এই অফিসে রাত-দিন অবস্থান করে তিনি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া ও নির্দেশাবলীয় তুলে ধরেছেন গণমাধ্যমের কাছে।

এই কার্যালয় থেকে রিজভী বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। এরকম মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটায় দুই দফা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়েছে তাকে। পরে আবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সেই কার্যালয়েই চলে এসেছেন।

দুই বছরের বেশি সময় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের ছোট কক্ষেই কেটেছে রুহুল কবির রিজভীর

এই অফিসে থেকে রিজভী দলীয় কার্য্ক্রমের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা নেতা-কর্মীদের নানা সমস্যার কথা শুনেছেন। সার্বক্ষণিক লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।

এখানে থেকেই তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনৈতিক প্রবন্ধও লিখেছেন। ওইসব প্রবন্ধের সংকলনে ‘সময়ের স্বরলিপ’ গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন এই অফিসে থেকেই, যার প্রকাশনার অনুষ্ঠান হয় কার্যালয়ের নিচতলায় গত ৬ মার্চ।

রিজভীর সহধর্মিণী আনজুমান আরা আইভি মাঝে মাঝে কার্যালয়ে এসে দেখা করে যেতেন।

এই দীর্ঘ সময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা রিজভীর ছোট কক্ষে গিয়ে তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন।