কোয়ারেন্টিনের কথা এয়ারপোর্টে কেউ বলেনি: কামরান

অতি সংক্রামক নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে ঢাকায় মুজিববর্ষের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান অজুহাত দেখিয়ে বলেছেন, কোয়ারেন্টিনে থাকার বিষয়ে বিমানবন্দরে তাকে ‘কেউ কিছু বলেননি’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2020, 11:37 AM
Updated : 19 March 2020, 12:36 PM

এই ভাইরাসে ‘আক্রান্ত নন’ বলে তিনি ‘শতভাগ নিশ্চিত’ বলেও দাবি করেছেন, যদিও তার কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।

বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই ভাইরাস কবলিত দেশ থেকে আসা প্রত্যেককে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।

গত ডিসেম্বরের শেষদিনে চীনের উহান শহরে প্রথম দেখা দেওয়া এই ভাইরাস মানবদেহে কয়েক দিন সুপ্তাবস্থায় থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, ওই সময় রোগের কোনো উপসর্গ দেখা না গেলেও আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।  

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে যাওয়ার পর ব্রাজিলের প্রতিনিধি দলের এক সদস্যের করোনাভাইরাস ধরা পড়লে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে কি না তার জন্য ট্রাম্পেরও পরীক্ষা হয়।

এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যখন মানুষের চলাচলে লাগাম টানার পাশাপাশি অনেক দেশে নাগরিকদের কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলেছে, সেখানে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেই আওয়ামী লীগ সভাপতির উপস্থিতিতে দলটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বদরউদ্দিন কামরান।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন অনেকেই। ফজলুল বারী নামে একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লিখেছেন, “বিদেশ থেকে এসে ১৪ দিনের কোয়ারিন্টিন সময় না মানায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক প্রবাসীদের জরিমানা করা হচ্ছে। সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরানকে জরিমানা করবে কে? তিনি কিন্তু বিলাত থেকে ফিরেই জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন! এর ছবি এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

“লন্ডনে থাকতেও যে তিনি দলীয় সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন সে ছবিও এখন ভাইরাল। তার নিরাপত্তার জন্যে, সবার নিরাপত্তার জন্যে জরিমানা করে তাকে বাধ্যতামূলক কোয়ারিন্টিনে পাঠানো দরকার। তিনি নিজের থেকে এ ব্যাপারে সাড়া দিলে তার জনপ্রিয়তা বাড়বে। করোনা আক্রান্ত বিলাতের অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ। স্কুল-মসজিদও সেখানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।”

আরও অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সিলেটের সাবেক মেয়র কামরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি শতভাগ নিশ্চিত যে, এই ধরনের রোগে আক্রান্ত না। কারণ বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় যে হলুদ ফরম তারা দিয়েছেন তা ফিলআপ করে দিয়েছি। আর সিলেট এয়ারপোর্টে নামার পর তারা আমাকে চেকআপ করে দেখেছে। আর ওই ধরনের রোগের উপসর্গ যেটা, এগুলো কিছুই আমার মধ্যে নেই।

“এছাড়া আমার ছেলে ডাক্তার, সে সার্বক্ষণিক আমার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিচ্ছে, আমার মধ্যে এমন কোনো সমস্যা নেই।”

যুক্তরাজ্য থেকে ১৪ মার্চ দেশে ফেরা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান তিন দিনের মাথায় ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ঢাকার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ও ছিলেন তিনি।

এর পদক্ষেপের ব্যাখ্যায় কামরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার শরীরের যে অবস্থা, তাতে আমি পুরোপুরি সুস্থ বলতে পারি। যে কারণে বিষয়টাকে আমি এভাবেই দেখছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে যোগ দেওয়াটা ছিল আমার আবেগের জায়গা।

“বিদেশ থেকে ফেরার সময় এয়ারপোর্ট বা সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে কেউ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এমন কথা বলেনি, আমি জানতাম না বিষয়টা। শুধু আমি কেন আমার সঙ্গে যারা এসেছে কাউকেই তো ওই দিন কেউ বলেনি যে, আপনাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

“তাহলে আমি তো জানি না এই বিষয়টা। জানার পর থেকে আমি বাসায়ই আছি, বাইরে বের হচ্ছি না।”