করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীনের বার্তা এসেছে: কাদের

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের উৎস যেখানে সেই চীন এই ভাইরাস প্রতিরোধের পথ দেখিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2020, 12:56 PM
Updated : 15 March 2020, 01:26 PM

রোববার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “চীনই একমাত্র কন্ট্রোল করতে পেরেছে এবং তারা কীভাবে কন্ট্রোল করেছে এই মর্মে একটা চিঠি আমাদের কাছে এসেছে।

“এই রোগের সংক্রমণ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সেটায় সহযোগিতা করবে তারা-এমনই একটি আভাস দিয়ে একটা চিঠি আমাদের দিয়েছে।”

আড়াই মাস আগে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানবদেহে ঘটে। পরে এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় নভেল করোনাভাইরাস, রোগের নাম হয় কভিড-১৯।

উহান থেকে দ্রুতই চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস; লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।

কিন্তু এরপর চীনের নানা পদক্ষেপে সংক্রমণের গতি কমে আসে। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ইতালি থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশসহ আরও বহু দেশে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের এখন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরোপ।

শনিবার চীনে যেখানে নতুন করে ২০ জন এই ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন, সেখানে ইতালিতে নতুন ২ হাজার ৫৪৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এদিন চীনে মৃত্যু হয়েছে দশজনের, আর ইতালিতে মারা গেছেন ২৫২ জন।

এই ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশও এখন ‘প্রস্তুত’ দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সরকার যেমন প্রস্তুত আমাদের পার্টিও প্রস্তুত। সতর্কতার অভিযানে আমরা দেশবাসীকে সতর্ক করতে কেন্দ্রীয়ভাবে লিফলেট বিতরণ করছি। আমাদের এখানে এখনও সংক্রমিত হওয়ার উদাহরণ নেই। যারা সংক্রমিত তারা বিদেশ থেকে এসেছে এবং বাকি যারা আসছে তাদের কোয়ারেন্টিনের ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধ করা হচ্ছে না কেন- সে প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “সরকার থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, গতকাল থেকে কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেওয়া কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।

কাদের বলেন, “আজকে আন্তর্জাতিকভাবে যে ভাইরাসটি আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, যেটা দেশে দেশে ছড়িয়েছে। এটা একটা মহামারী আকার ধারণ করেছে।

“যে কারণে আমাদের দেশেরও উদ্বেগ আছে, উৎকন্ঠা আছে। আমাদের জনগণের মধ্যে এই নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। কারণ বাংলাদেশ খুব জনবহুল দেশ, এখানে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে এর কী হতে পারে! আজকে জার্মানি, ব্রিটেনের মত দেশ বাদ যাচ্ছে না, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৪৯টি দেশ আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে আমাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পরিবর্তিত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।”

মুজিববর্ষের উদ্বোধন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধু জন্ম নিয়েছিলেন, এবারের জন্মশতবার্ষিকী কাকতালীয়ভাবে একই দিনে হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন যে দিনে সেদিনই শতবার্ষিকী হয়ে গেছে।“

দলীয় কর্মসূচি:

১৭ মার্চ সকাল ৬.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের সব আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সবাইকে নিয়ে টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল করা হবে। এছাড়া দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে অসহায় দুঃস্থদের মাঝে খাবার, বস্ত্র ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবহার্য সামগ্রী বিতরণ করবে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপ কমিটি।

দুপুর ১টায় বনানীর কড়াইল বস্তিতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ করবে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে।

রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ উপলক্ষে সারা দেশে একযোগে আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো হবে।

ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাজি হবে। এছাড়াও রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে সাজসজ্জা করা হবে।