কামাল-কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন কমিটিতে গণফোরামের একাংশের অনাস্থা

কামাল হোসেন ও রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিতে অনাস্থা জানিয়ে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে দলের মুখপাত্র ঘোষণা করেছে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ-মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে গণফোরামের একাংশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2020, 07:16 PM
Updated : 14 March 2020, 07:16 PM

শনিবার বিকালে জরুরি এক বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান গণফোরামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, যিনি এই বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন।

তিনি বলেন, “এই সভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন দলীয় ঐক্য রক্ষা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মুখপাত্র হিসেবে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী দায়িত্ব পালন করবেন।

“আমরা গণফোরামের দীর্ঘ দিনের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী হিসেবে জাতীয় শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, অনতিবিলম্বে দলের সকল প্রবীণ নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে দলকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা ও দলীয় ঐক্য রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।”

এই বর্ধিত সভা আগামী দুই সাপ্তাহের জন্য মূলতবি করা হয় জানিয়ে অধ্যাপক সাইয়িদ বলেন, “আমরা আশা করছি, এই সময়ের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হবে।”

নেতাদের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যে এই মাসের ‍শুরুতে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কামাল হোসেন। তার এক সপ্তাহের মাথায় গত ১২ মার্চ কামাল হোসেনকে সভাপতি ও রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে গণফোরামের ৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে ঠাঁই হয়নি দলটির তিন পরিচিত মুখ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু ও অধ্যাপক আবু সাইয়িদের।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ অভিযোগ করে বলেন, “আজ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ড. কামাল হোসেন যিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা তাকে সামনে রেখে কিছু উচ্চাভিলাষী, কুচক্রীমহল দলে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

“বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও গঠনতন্ত্র লংঘন করে দীর্ঘ ১০ মাস কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান করেনি। ফলে দলের ভেতর উপ দল,বহিষ্কার, পাল্টা বহিষ্কারের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত ও হতাশাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করছে। একই সঙ্গে দলটির সাংগঠনিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করছে।”

এ বিষয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার অবস্থান কী জানতে চাইলে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, “আমি বলতে চাই, দীর্ঘ ১১ মাস যাবত উনি (রেজা কিবরিয়া) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুঃখের সাথে বলতে হয়, উনি দলের কোনো পর্যায়ের সভা এবং মাঠ পর্যায়ের মিটিং ডাকতে পারেননি। একজন সমন্বয়ক অর্থাৎ একজন সাধারণ সম্পাদকের যে দায়িত্ব সেটা উনি পালন করতে পারেননি।

“বরং উনি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বহিষ্কার এবং পাল্টা বহিষ্কার উনি নিজেও হয়েছেন। উনি নিজেই দল ভেঙে দিলেন, নিজেই উনি আহ্বায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়ে গেলেন। স্বঘোষিত স্বঘোষিত- একই ব্যক্তি সব করছেন। উনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।”

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গণফোরামে সক্রিয় মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, “ড. কামাল হোসেন সাহেবকে কিছু বললে উনি বলেন যে, আমি ভাই কিছু জানি না। উনাকে তো জানতে হবে, উনি সভাপতি, প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট- সবার শ্রদ্বেয় পাত্র, এখনও আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি, তাকে আমাদের মাথার উপরে রাখতে চাই। এখনও আহবান জানাচ্ছি, দলের প্রবীণ নেতাদের সাথে পরামর্শ করে সংকটের উত্তরণ ঘটান।”

মতিঝিলে পুরাতন ইডেন হোটেলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সদ্য গঠিত ৭১ সদেস্যর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিতে বাদ পড়া নেতাদের জরুরি বর্ধিত সভা হয়। এতে কুমিল্লা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ ১২ জেলার প্রতিনিধিরা ছাড়াও বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা অংশ নেন।

গণফোরামের বিগত কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিকের পরিচালনায় বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান, আবদুল আউয়াল, নীলুফার ইয়াসমীন শাপলা, কুমিল্লার আব্দুস সাত্তার পাঠান, ময়মনসিংহের রায়হান উদ্দিন, গাজীপুরের কাজী রফিক, চট্টগ্রামের রতন ব্যানার্জি, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার তরিকুল হক, সহযোগী সংগঠন যুব গণফোরামের নাসিরউদ্দিন, মাহবুব উল্লাহ মধু, ছাত্র ঐক্য ফোরামের সানজিদ রহমান শুভ, ঢাকা মহানগরের কামাল উদ্দিন সুমন, সাহাবুদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করে অবিলম্বে তাকে অপসারণের দাবি জানান বক্তারা। 

সভায় অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীও  রেজা কিবরিয়ার সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন ।