‘জয় বাংলা’ নয়, ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগানের পক্ষে রিজভী

মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ী স্লোগান ‘জয় বাংলা’কে উচ্চ আদালত জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহারের কথা বললেও তাতে একমত নন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2020, 11:35 AM
Updated : 11 March 2020, 11:37 AM

তিনি বরং ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগানের পক্ষে। নিজের এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

তিনি বলেছেন, “দেখুন জয় বাংলা, মানে বাংলার জয় হোক। যখন বাংলা পরাধীন ছিল তখন জয়ের প্রশ্ন এসেছে। ১৯৭১ সালে জয় বাংলা স্লোগান ছিল, মানুষ দিয়েছে। এরপরে তো স্বাধীন হয়ে গেছে দেশ, এখন দেশটা টিকিয়ে থাকার ব্যাপার। চারিদিকে আধিপত্যগামী বিভিন্ন দেশ আছে বা বাংলাদেশকে যারা ছোট করে রাখতে চায়, খাটো করে রাখতে চায় তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে চায়।

“এই সমস্ত জায়গা থেকে সবচেয়ে বড় হচ্ছে যে, বাংলাদেশকে টিকে থাকা, এই টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য শ্লোগান হচ্ছে- জিন্দাবাদ, জিন্দা থাকতে হবে।”

মঙ্গলবার একটি রিট মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মত শুনে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ আগামী বিজয় দিবস থেকে সর্বস্তরে ‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ বলে অভিমত দেয়।

এ বিষয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি আরও বলেন, “কে কোন স্লোগান দেবেন, কোন রাজনৈতিক দল কীভাবে স্লোগান দেবেন, কী স্লোগান দেবেন- সেটা আদালতের রায় দিয়ে নির্ধারিত হয় না।”

প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, “আমি কোন স্লোগান দেব, এটার জন্য আদালত কেন পরামর্শ দিতে যাবেন? যখন বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন চলছে বা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে তখন কার আদালত ছিল? তখন পাকিস্তানিদের আদালত ছিল। তারা যদি মনে করত যে, এই সংগ্রাম ঠিক না, তারা আদালতের রায় দিয়ে কি স্বাধীনতা যুদ্ধকে ঠেকাতে পারত? তারা স্বাধীনতা যুদ্ধকে ঠেকাতে পারত না।

“আমি বলতে চাই, ইতিহাস নির্মাণ হয় জনগণের ইচ্ছায় এবং জনগণের পক্ষের নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে। এখানে আদালতের রায়ের কোনো ভূমিকা নেই। কারণ মানুষ যখন সচেতন হয়ে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা, তার অধিকারগুলো নিয়ে যখন সচেতন হয় তখন তারা সংগ্রাম করে কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এটাই যুগে যুগে হয়েছে।”

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আদালতের রায় দিয়ে পৃথিবীতে কখনও স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়নি, কখনও রেভ্যুলেশন হয়নি, সব হয়েছে জনগণের ইচ্ছায়। জনগণ যখন বঞ্চিত হয়েছে, জনগণ যখন পদদলিত হয়েছে তার বিপক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছে জনগণ তখনই একটা পরিবর্তন হয়েছে। সেটাই হচ্ছে ইতিহাসের আনন্দিত উচ্চারণ, সেটাই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে।

“আদালতের রায়ের উপরে যদি ফরাসি বিপ্লব হত, আমেরিকান রেভ্যুলেশন হত তাহলে আদালতের রায় হয়ত দিত ওইগুলোর বিরুদ্ধে। মানুষ ফুঁসে উঠেছে কায়েমি স্বার্থবাদীর বিরুদ্ধে যারা তখন দেশ শাসন করছে, যাদের স্বার্থ আছে, তাদের পক্ষেই তো আদালত থাকে। এর বাইরে তো আদালত যেতে পারছে না।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আনোয়ার হোসেন বুলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।