জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মান্নান।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু যেভাবে মানুষকে বিশ্বাস করতেন, সেই বিশ্বাসঘাতকদের কারণেই তিনি নিহত হয়েছেন ১৫ অগাস্টের কালরাত্রিতে।
“সেরকম বিশ্বাসঘাতক তো এখন আমাদের চারপাশে আছে, সরকারে আছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার ধারে-কাছে নাই, সেটা আমরা হলফ করে বলতে পারব না।”
স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের সঙ্গে আরও কেউ কেউ ছিলেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা নানা সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে দলের ভেতরের ষড়যন্ত্রকারীদের কথা বলে থাকেন।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সম্প্রতি দলের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আমি জানি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কী অবস্থায় আমাদের চলতে হয়েছে। ওই সময় অনেকের ভূমিকা আমি জানি।”
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার কাজের প্রশংসা করে অধ্যাপক মান্নান বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরলস পরিশ্রম করেন। উনি দিনে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান কি না, এটাও আমার সন্দেহ আছে। কারণ উনার সাথে একাধিকবার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। উনার সাথে তো দৌড়ায়েও পারি না!”
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, “আমরা এখনও চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয়েছি, তা ভাবার কারণ নাই, কারণ এখনও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি তৎপর রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে ফোরামের সভাপতি সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ আমাদেরকে এতই আন্দোলিত করেছিল, যে কারণে আমরা চুপ থাকতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের কারণে আমি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে থেকেই বিদ্রোহ করতে পেরেছিলাম।”
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার।
তিনি বলেন, “১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের সময়ের দিকে তাকালে দেখা যায়, অন্যান্য সিনিয়র নেতারা পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক সময় আপস করলেও শেখ মুজিবই একমাত্র নেতা যিনি বাঙালির স্বার্থের প্রশ্নে একটি বারের জন্যও আপস করেননি।”
অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ভারত ভাগের সময় ধর্মের ভিত্তিতে নয়, অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার চিন্তা ছিল বঙ্গবন্ধুর মনে। ১৯৪৮ এ না পেরে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে।
“৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার যখন পূর্ব বাংলার নাম বদল করে পূর্ব পাকিস্তান নামকরণের প্রচেষ্টা শুরু করে, তখন জোরোশোরে এর বিরোধিতা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।"
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব সাংবাদিক হারুন হাবীবের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফোরামের সহ-সভাপতি আনোয়ার আলম শহীদ, যুগ্ম মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, শাহজাহান মৃধা, স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্মী ও ফোরামের নারী পরিষদের সভাপতি লাইলা হাসান প্রমুখ।