ব্যবসায়ীদের ডেকে চাঁদার ফর্দ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে: রিজভী

মুজিববর্ষ উদযাপনকে সামনে রেখে সারাদেশে ‘চাঁদাবাজির মহোৎসব’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2020, 11:57 AM
Updated : 4 March 2020, 11:57 AM

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মুজিব জন্মশতবার্ষিকী পালন নিয়ে চলছে তুঘলকি কাণ্ড, মুজিব জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে সারাদেশে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। ব্যবসায়ীদের দিন কাটছে চাঁদাবাজদের আতঙ্কে।”

রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যতই বলুন না কেন মুজিববর্ষের নামে চাঁদাবাজির দোকান দেওয়া যাবে না, এটি তার মুখের কথা। বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। নেতারা বড় বড় ব্যবসায়ীদের ডেকে চাঁদার ফর্দ ধরিয়ে দিচ্ছেন।

“এখানেই থেমে নেই। সিটি করপোরেশন মুজিববর্ষ উপলক্ষে রাজধানীর প্রতিটি বাড়ির দেয়াল রং ও সংস্কার করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সাধারণ মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে এই বর্ষ পালনে। সদ্য সরকারি হওয়া ৩০৪টি কলেজকে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য তৈরি করতে গত ১৪ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।”

তিনি বলেন, “মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কেবল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আয়োজন করতে যাচ্ছে ৯৭টি ইভেন্ট, যার সম্ভব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। এভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ টাকা খরচের উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সবাই হতবাক। যেখানে দেশের তরুণ সমাজ বেকারত্বে ধুঁকছে, মানুষ অর্ধহারে-অনাহারে দিনযাপন করছে, সেখানে এভাবে অর্থ খরচের উৎসব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।”

নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর প্রসঙ্গ

মুজিববর্ষের আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “দিল্লিতে সুপরিকল্পিতভাবে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এটি কেবল বাংলাদেশের মানুষের বক্তব্য নয়, গতকাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও সমাবেশে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি বরং সুপরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছে।

“নিজ দেশেই যে রক্ত ঝরছে সেটিকে বন্ধ না করে মিস্টার মোদী যে বাংলাদেশে আসছেন সেটি কি এদেশের মানুষকে উপহাস করা নয়? এটি তার বিবেচনায় থাকা উচিত।”

‘বিচার বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের শাখা’

পিরোজপুরের সরকার দলীয় এক সাবেক সাংসদ ও তার স্ত্রীকে সকালে কারাগারে পাঠিয়ে বিচারক বদলের পরই বিকালে তাদেরকে জামিন দেওয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন অভিহিত করেন রুহুল কবির রিজভী।

“দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা ও পৃথকীকরণের পরিবর্তে নিশিরাতের সরকার বিচার বিভাগকে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা হিসেবে পরিণত করেছে। বিচারকের কাজ এখন ন্যায় বিচারের মাধ্যমে রায় দেওয়া নয়, ক্ষমতাসীন মহলের কাছ থেকে পাঠানো রায় পাঠ করা। আওয়ামী লীগ আইন আদালতকে তাদের পকেট আর ভ্যানেটি ব্যাগ ভরেছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন এই কথা এখন নিছক কৌতুক।”

“এখন পিরোজপুরের সেই স্বাধীন বিবেকের বিচারকের পরিণতি কী হবে তা নিয়ে দেশবাসী শংকিত। তার পরিণতি কি এস কে সিনহার মতো হবে, না মোতাহার হোসাইনের মতো হবে তা নিয়ে দেশবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই গভীর শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করছে।”

‍সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য শাহিদা রফিক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।