আ. লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও ‘সম্পর্ক’ ছিল পাপিয়ার: তদন্ত কর্মকর্তা

মাদক-অস্ত্র চোরাচালান, জমি দখল ও হোটেলে নারীদের দিয়ে যৌন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ‘সম্পর্ক’ ছিল বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2020, 01:16 PM
Updated : 26 Feb 2020, 01:33 PM

জাল মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন ওরফে সুমন চৌধুরীসহ চারজনের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছিল।

সোমবার আদালতের আদেশের পর এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী পাপিয়াসহ আসামিদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে বুধবার বিকালেই মামলার তদন্ত ভার গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

একদিনের জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বলে জানান কায়কোবাদ কাজী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া জানিয়েছেন, যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের সাথে তার সম্পর্ক ভালো। এছাড়া আওয়ামী লীগের কিছু শীর্ষ নেতার সাথেও তার সম্পর্ক ছিল।

“তবে এই সম্পর্ক সাংগঠনিক নাকি একান্তই ব্যক্তিগত পর্যায়ের, সে বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”

আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার সঙ্গে পাপিয়ার সম্পর্ক ছিল তা প্রকাশ করেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “পাপিয়া অত্যন্ত চতুর। তার কাছ থেকে কথা বের করা খুবই জটিল। অনেক কিছুই এড়িয়ে যেতে চায়। কিছু কিছু কথার আবার মিল পাওয়া যায় না।”

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামীসহ ওই চারজনকে শনিবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সে সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান রুপি ও সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট’ ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটি টাকার উপরে।

রোববার ওয়েস্টিনের ওই প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট এবং ইন্দিরা রোডে পাপিয়াদের দুটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট ও কিছু বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করার কথা জানায় র‌্যাব।

গ্রেপ্তারের পর পাপিয়াকে বহিষ্কার করেছে যুব মহিলা লীগ। অস্ত্র ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আরও দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলায়ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

বিমানবন্দর থানার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ চলার মধ্যেই তদন্তের দায়িত্ব গেল গোয়েন্দাদের হাতে।

পরিদর্শক কায়কোবাদ সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি এখন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। তারা আসামিদের নিয়ে গেছে। থানা পুলিশের এখন করার কিছু নেই।”

আলোচিত এই মামলা তদন্তে আগ্রহী র‌্যাবও। পাপিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলাই তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম জানিয়েছেন।

“অনুমতি পেলে র‌্যাব এই মামলার তদন্ত করবে,” বলেন তিনি।