জনগণের দৃষ্টি সরাতে মুখরোচক অপকর্ম ফাঁস: মোশাররফ

আওয়ামী লীগ সরকার গভীর সংকটে পড়লে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতে দলীয় লোকদের ‘মুখরোচক অপকর্ম’ প্রকাশ করে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2020, 11:55 AM
Updated : 25 Feb 2020, 12:24 PM

সম্প্রতি নরসিংদী যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার ক্যাসিনোকাণ্ডে বন্দী আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি একথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, “আজকে আপনারা দেখেন, যখনই কোনো গভীর সংকট সরকারের সামনে, তখনই তাদের লোকজন যেসব অপকর্ম কিছু করছে মুখরোচক- ওইটাকে প্রকাশ করে দিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়, ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে চায়।

“যে সময়ে ক্যাসিনো অভিযান হয়, সেই সময়েও সরকারের একটা ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ছিল। বর্তমানেও সরকার সকল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আজকে একটা খাদের কিনারায় গিয়েছে বলে আমি মনে করি। তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই সরকার এসব জিনিসকে সামনে এনে জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে চায়।”

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “ক্যাসিনোবাজি-চাঁদাবাজি হচ্ছে, সর্বশেষে যুব মহিলা লীগের একজন সাধারণ সম্পাদিকা। আপনারা পত্র-পত্রিকায় তার সম্পর্কে দেখছেন, আরো দেখবেন। যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে তখন সরকারের দায়িত্ব হলো তাকে ওই দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া এবং পরে বলা হয় যে, এগুলোর সাথে আমাদের কেউ নাই।

“আমাদের প্রশ্ন- এই সম্রাটরা, এই মহিলা সম্রাটরা যা কিছু করছে তারা কি পরিচয়ে করছে? আবরারকে বুয়েটে হত্যা করলো যে দানবরা তারা কী নামে করেছে? সরকারি দলের ছাত্রলীগের নামে। এই সম্রাটরা সকল প্রশাসনের চোখের সামনে বছরের পর বছর ক্যাসিনো চালালো কেউ দেখে না- এটা কী বিশ্বাসযোগ্য?”

এই বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে যখন মহিলা যুব লীগ নেত্রী এই কাণ্ড করেছে, ফেইসবুকে আমরা দেখতে পারছি কতজনের সাথে তার সম্পর্ক। গতকাল র‌্যাবের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করে বলা হয়েছে, তার থেকে অনেক ভিডিও রেকর্ড পেয়েছে আপত্তিকর। আমরা দাবি করতে চাই, সব আমাদের জানানোর দরকার নাই। যেসব ব্যক্তিরা এর সঙ্গে জড়িত তাদের নাম অনতিবিলম্বে প্রকাশ করা হোক।”

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আজকে ৯ থেকে ১১টা ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে আছে। শুধুমাত্র সরকার টিকে থাকার জন্য চাপাবাজির মাধ্যমে এই ব্যাংকগুলো আজকে সচল রেখেছে। আসলে তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে।

“দেউলিয়া হলো কেন? সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ অর্থ লুট হয়েছে। কী কী প্রক্রিয়ায়? একটা হলো- ভুয়া এলসি করেছে, মালামাল আনে নাই সেই টাকাটা পাচার করে দিয়েছে। আরেকটি হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রি করে নাই, ভুয়া শিল্পকারখানার নাম দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, সেই টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।

“আর হচ্ছে- লুটতরাজ, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি। এগুলোতে ১০ টাকার কাজকে একশ টাকায় পরিণত করে ৯০ টাকা পাচার করে দিয়েছে। আজকে এই ব্যাংকগুলো পরিচালনায় এবং লুটপাটের কারণে স্বাভাবিকভাবে দেশের টাকা যদি বিদেশে চলে যায় তাহলে তো দেশের অর্থনীতি তো খারাপ হবেই।”

তিনি বলেন, “গতকাল পত্রিকায় দেখলাম- এই ব্যাংকগুলোতে যাদেরকে পরিচালক করা হয়েছিল তারাই বেশি লুট করেছে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে। যদি রক্ষক ভক্ষক তাহলে একরম পরিণতি হবে। অর্থনীতি চরমভাবে বিপর্যস্ত।”

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের নেতাদের ঈদের বকশিশ দেওয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সলরদের আলোচিত নানা ঘটনা তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক।

খালেদা জিয়াকে জামিন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, জামিন হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার। সরকারের হস্তক্ষেপেই তাকে জামিন পাওয়ার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের উদ্যোগে ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

এলডিপির একাংশের মহাসচিব ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে নির্বাহী সভাপতি আজিজুল হাই সোহাগের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মো. মাওলানা আবদুল করীম ও এলডিপির একাংশের যুগ্ম মহাসচিব এম এ বাশারখ বক্তব্য দেন।