মঙ্গলবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রওশন বলেন, “ছোট ছোট বাচ্চাকে ধর্ষণ করছে। এত নীচে নেমে গেছে মানসিকতা, চিন্তা করলে লজ্জা লাগে।”
তিনি প্রশ্ন করেন, “নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়। সেই ক্ষমতায়ন কোথায়?”
এ সময় সংসদে হাসির রোল পড়ে। সরকারি দলের বেঞ্চ থেকে তার বিরোধী দলীয় নেতা হওয়ার কথা বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় তার নিজের দিকে, রওশন এরশাদের দিকে ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দিকে ইশারা করেন।
এর জবাবে রওশন বলেন, “সংসদে ভাগ্যচক্রে হয়ে গেছে। গুটিকয়েক মহিলা নিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা যাবে না। আমি লাকিলি বিরোধী দলীয় নেতা। আপনি প্রধানমন্ত্রী, সেটা নির্ধারিত। কেউ প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে পারবে না। সংসদে কয়েকজন আছি, ছিটেফোঁটা। এখানে পুরুষ সদস্য বেশি। বুঝতে হবে- নারীর ক্ষমতায়ন নেই।”
বিরোধী দল হিসেবে নিজের দল জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, তাদের সহযোগিতার জন্য দেশ ‘দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে’।
তিনি বলেন, “আমরা জানি, একটি দেশের অগ্রযাত্রার মূল শক্তি হিসেবে প্রয়োজন সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়। অতীতের বিরোধী দলগুলো সরকারকে কখনোই সহযোগিতা ও সমন্বয় করেনি, যে কারণে দেশ আশানুরূপ এগিয়ে যায়নি।
“২০১৪ সাল থেকে আমাদের দল জাতীয় পার্টি এবং আমি, বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকে সরকারের যেমন সমালোচনা করেছি, ভুল ত্রুটি তুলে ধরেছি, জনগণকে সচেতন করেছি, পাশাপাশি সরকারের সাথে সহযোগিতা ও সমন্বয় করে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। আর এ কারণেই দেশে নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থেকেছে- দেশ এগিয়ে গেছে দুর্বার গতিতে।”
রওশন বলেন, “বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল সংসদে যেমন সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে, ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে তেমনি সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করে। সংসদীয় গণতন্ত্রের মূলকথা হচ্ছে, সরকার ও বিরোধী দলীয় পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের সকল অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই ইতিহাস একদিন তার সাক্ষ্য দেবে।”
অধিবেশনে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন বলেন, “অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়াকে আমরা অতিক্রম করব। কীভাবে করব সেটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে আছি। কোন বিষয়ে এগিয়ে যাব? ব্যাংকে টাকা নেই। ঋণ নিয়ে ফেরত দেয় না। এখানে বিনিয়োগ করে না। টাকা বাইরে নিয়ে গেছে। রিজার্ভ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে সোনার বদলে তামা। কীভাবে এগিয়ে যাব? এর একটা ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রীর দেওয়া উচিত।
“শেয়ার বাজারে ধস। কোন দিকে কী হল? অর্থমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিলে ভালো হয়।”
কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, “ব্যাংকের টাকা নিয়ে কোথায় নিয়ে গেল, খবর নিয়েছেন? অনেক দেশ কালো টাকা বিনিয়োগ করতে দেয়। যদি জিজ্ঞেস না করেন তবে হয়ত বিনিয়োগ করতে পারে।”
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সমালোচনা করে রওশন বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীকে কোনো সময় সংসদে দেখা যায় না। উনি সব সময় বিদেশে থাকে। খুবই কম দেখেছি সংসদে। কোনো সময়েই তাকে পাওয়া যায় না। আজকেও নেই।
“জিপিএ-৫ এর দিকে সবার নজর। যে নমুনা দেখেছি, কারও কোনো জ্ঞান আছে বলে মনে হয় না। বিদেশে থেকে এখানে এসে চাকরি করছে। দেশের লোক চাকরি পায় না। কারণ যোগ্যতা নেই। ভাষা শিখতে হলে গ্রামার জানতে হবে। এখন গ্রামার নেই। কী করে ভাষা শিখবে? শিক্ষামন্ত্রী বদলে গেলে শিক্ষার পদ্ধতি যদি বদলে যায় তাহলে কীভাবে হবে?”
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কচুরিপানা নিয়ে বক্তব্যের সমালোচনা করে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন বলেন, “কিছু কচুরিপানা নিয়ে এসেছিলাম। প্ল্যানিং মিনিস্টার এখানে নেই। গরুর খাবার কি মানুষ খেতে পারে? ঘাসে তো ভিটামিন আছে। আমরা কি খাই?”
ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন এখন ড্রেন পরিষ্কার করে না। মশার যন্ত্রণা। কথা বলতে গেলে মুখে মশা ঢোকে। আমরা ওয়াসাকে ট্যাক্স দেই। সিটি করপোরেশনকে ট্যাক্স দেই। তাহলে ট্যাক্স বন্ধ করে দেব। যদি সেবাই না পেলাম তাহলে কেন দেব?”
তরুণ প্রজন্ম রাতে ঘুম বা পড়শোনা কোনোটাই করে না দাবি করে রাত ১১টা থেকে সকাল পর্যন্ত ফেইসবুক বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন রওশন এরশাদ।