মানুষ কেন ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, তার কারণও খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট শরিক হিসেবেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ওই নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে বিএনপির।
এরপর কয়েকটি উপ-নির্বাচন এবং সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি খুব কম থাকায় নির্বাচন নিয়ে জনগণের আগ্রহ-আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে অনেকের অভিমত।
রোববার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “নির্বাচন গণতন্ত্রের মূল কথা। মানুষের কাছে নির্বাচন স্বচ্ছ করা না গেলে, আস্থা অর্জন করা না গলে গণতান্ত্রিক সরকার হবে না।
“নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য সব দলের বসা উচিত। অবিশ্বাস, আস্থার অভাব মেটানো দরকার। নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে।”
দেশের উন্নয়ন টেকসই করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, “অনেক দেশের উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু হঠাৎ ধসে গেছে। উন্নয়ন টেকসই করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন- মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংসদের ভূমিকা আছে- এটা মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে। সংসদে আইন পাশ হচ্ছে। কিন্তু সংসদে এসে আইন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কীভাবে সংসদকে আরও প্রাণবন্ত করা যায় ভাবতে হবে।”
বিএনপির জাহিদুর রহমান বলেন, “নির্বাচন কলঙ্কিত। ঘরে বাইরে কোথাও মানুষ নিরাপদ বোধ করছে না।“
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিআইবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না। নির্বাচনের আগে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হয়। তাই নতুন নির্বাচন প্রয়োজন। একাদশ নির্বাচন এক কথায় বলা যায়, কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয় তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। রাতে সিল মারার অভিযোগ যে কোনো সরকারের জন্য অস্বস্তির বিষয়।”
ইভিএমকে মানুষ আস্থায় নিচ্ছে না দাবি করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, “এটি ত্রুটিমুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। ঢাকা সিটি নির্বাচনে ইভিএমের যে চিত্র দেখা গেছে মেশিনের চেয়ে মানুষের ভূমিকা বেশি দেখা গেছে, পেশি শক্তি। ৮৫ ভাগ ভোটারেরর সমর্থন তাদের পক্ষে নয়।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে জাহিদুল বলেন, “রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয় নিবেদন, অতি দ্রুত বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিন।”
সংসদ সদ্স্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, “সরকার প্রধান একই সঙ্গে সরকার প্রধান ও সংসদ প্রধান হিসেবে যা সুপারিশ করবেন সংসদে তা গ্রহণ হবে। সংবিধান তাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক কর্তৃত্ব দিয়েছে। এক্ষেত্রে সদস্যদের ভূমিকা গৌণ ও পরামর্শমূলক।
“সংসদ সদস্য নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বা হ্যাঁ সূচক সম্মতি হচ্ছে তার কাজ। সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিলের সুযোগ তাদের নেই।“
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিতে হয় বলে মনে করেন জিএম কাদের।
তিনি বলেন, “না হলে সংসদ সদস্য পদ হারাতে হয়। কিন্তু ওয়েস্ট মিনস্টার পদ্ধতিতে কেবল মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ ছাড়া বাকি সকলে বেসরকারি সদস্য। আমাদের কার্যপ্রণালী বিধিতেও এটি রয়েছে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়া বাকি সব সদস্যের সমন্বয়ে সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে সংসদে ভূমিকা রাখেন।
“কেবল মন্ত্রী বাদে সরকারি ও বিরোধী দলের সকল সদস্য একক ও যৌথভাবে এই দায়িত্ব পালন করলে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যেতে পারে। কিন্তু সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এখানে বাধার সৃষ্টি করছে। ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সরকারি দলের সকল প্রস্তাবই সংসদে গ্রহণ করা হয়। আমাদের সংসদ সদস্যরা নিজের বিবেক বিচার বুদ্ধি ও এলাকার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না।”
জিএম কাদের বলেন, “সংবিধানে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিধান থাকলেও তা বাস্তবায়ন অসম্ভব। তবে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ বাদ দেয়াও বাস্তবসম্মত নয়। এক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ক্ষণে ক্ষণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে, সরকারের স্থায়ীকাল অনিশ্চিত হওয়া বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে সরকার গঠন বাজেট অনুমোদন ও অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্যে ৭০ অনুচ্ছেদ সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। এতে সংসদ আরও বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর হওয়ার সুযোগ থাকে।”
ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব চালুর দাবিও করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
“এতে ছোট ছোট দলগুলোর সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থাকবে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এই আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি চালু রয়েছে,” বলেন তিনি।
দেশে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার বেশি মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, প্রতি বছর তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশুনা শেষ করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এর মধ্যে অর্ধেকের মত বেকার থাকে।