‘পকেটমার থেকে নেতা’ সামাল দেওয়াই চ্যালেঞ্জ: সিইসি 

সমাজের নানা স্তর ও পেশা থেকে এসে নির্বাচন প্রার্থী ও রাজনৈতিক নেতা বনে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করাকে কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2020, 01:49 PM
Updated : 16 Feb 2020, 01:49 PM

রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ৪৯ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার যোগদান উপলক্ষে ১২ দিনব্যাপী এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

সিইসি ‘পকেটমার থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের’ নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে নতুন যোগ দেওয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন।

তিনি বলেন, “নির্বাচনে  সমাজের সর্বস্তরের সংমিশ্রণগুলো একসঙ্গে পেয়ে যাচ্ছেন। এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়। তা মোকাবেলা করার বিষয় হল- চেষ্টা, দক্ষতা, একাগ্রতা ও ব্যক্তিত্ব। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।”

উন্নত দেশের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, “বাংলাদেশে অনেক সময় বলা হয়, আমেরিকা এমন করে, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিতে এরকম হয়, আমাদের এখানে হয় না কেন?

“ইউ মাস্ট থিঙ্ক গ্লোবালি, বাট অ্যাক্ট লোকালি। এটা অবস্থার ওপর নির্ভর করে।"

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে তো মলম পার্টি নিয়ে কাজ করতে হয়, ব্যাগ টানা পার্টি নিয়ে কাজ করতে হয়, ক্যাসিনো মেম্বার নিয়ে কাজ করতে হয়। আমাদের পকেটমার নিয়ে কাজ করতে হয়।

“তারা কেউ হয়ত ভোটার, কেউ হয়ত কমিশনার হয়ে যায়। দেখা গেল, যে গুলিস্তান মহল্লায় বা হকারদের কাছ থেকে টাকা নেয়; কিছুদিন পর হয়ত দেখা গেল সে নেতা, পাতি নেতা, উপনেতা তারপর পূর্ণ নেতা; তারপর কমিশনার।”

এসব প্রার্থীদের সামাল দেওয়া নিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নূরুল হুদা বলেন, ”এগুলোও তো আমাদের দেখতে হয়। কে জানে যে একদিন এমপি হবেন না তিনি। সুতরাং সেই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়।

”সেই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের যারা সবকিছু নিয়ে কাজ করেন, তাদের সামাল দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। এই দায়িত্ব আর কারও উপর দেওয়া হয়নি। সমাজের সর্বস্তরের সংমিশ্রণগুলো আপনারা (নির্বাচনের সময়) একসঙ্গে পেয়ে যাচ্ছেন।”

কর্মশালায় ভোটার তালিকার কর্মজ্ঞ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ইভিএম মেশিন নিয়ে কমিশনের ভূমিকাও নবীন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরেন সিইসি।

পাঁচ ‘নি’ চান মাহবুব তালুকদার

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় পাঁচ ‘নি’ যোগ করার প্রস্তাব করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। 

তিনি বলেন, “নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নিশ্চয়তা, নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা, নিয়মনীতি ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুতি রয়েছি।”

মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাব অনুযায়ী, ‘নিশ্চয়তা’ হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা;  নিরপেক্ষতা’ অর্থ নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান ও ভোট কার্যক্রম চালানোর প্রতিশ্রুতি; ‘নিরাপত্তা’ মানে ভোটার, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের নিরাপত্তা; ‘নিয়ম-নীতি’ অর্থ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে বিধি-বিধান পরিচালনের আওতায় আনা এবং ‘নিয়ন্ত্রণ’ অর্থ নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।

নূরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ তিন বছর পূর্ণ হওয়ার বিষয়টি তুলে তিনি বলেন,  “এই তিন বছরে অনেক অর্জন রয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে বিসর্জন।

“সংবিধান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে যে অপরিমেয় ক্ষমতা দিয়েছে, পৃথিবীর খুব কম দেশের কমিশন, এমন কি ভারতের নির্বাচন কমিশনও এমন ক্ষমতার অধিকারী নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতার কতটুকু প্রয়োগ করতে পেরেছে, তা সময়ই বিচার করতে পারবে।”

ইসি সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম শাহাদাত হোসেন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।