নাছিরের জায়গায় রেজাউল, তাপসের আসনে মহিউদ্দিন নৌকার প্রার্থী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেলেন না বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, তার জায়গায় মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে প্রার্থী করছে ক্ষমতাসীন দল।।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2020, 05:06 PM
Updated : 15 Feb 2020, 07:41 PM

আর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে নির্বাচিত শেখ ফজলে নূর তাপসের ছেড়ে আসা ঢাকা-১০ আসনে উপ-নির্বাচনে নৌকার টিকেট পেলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।

এর বাইরে আরও চারটি সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।

বাগেরহাট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আমিরুল আলম মিলন,  গাইবান্ধা-৩ আসনে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি,  যশোর-৬ আসনে শাহীন চাকলাদার এবং বগুড়া-১ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের স্ত্রী শাহদরা মান্নানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

দলীয় মনোনয়ন পেলে আবারও মেয়র নির্বাচিত হবেন বলে ‘কনফিডেন্স’ থাকার কথা কয়েক দিন আগে জানিয়েছিলেন নাছির, তবে এবার আর তাকে সেই পরীক্ষার সুযোগ দিল না আওয়ামী লীগ।

২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয়ে চট্টগ্রামের মেয়র পদে বসেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির। পাঁচ বছরের মাথায় সেখানে নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন হতে চলেছে, এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল নিয়ে রোববার বসবে নির্বাচন কমিশন।  

এবারও মেয়র পদে লড়তে চেয়েছিলেন আ জ ম নাছির, দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের কয়েক দিন আগেই সিটি করপোরেশন থেকে সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করে নিজের অনুসারী নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও দেখিয়েছিলেন।

তবে দুয়েকটি উদ্যোগের জন্য প্রশংসিত হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে বিরোধ এবং নগরীতে জলাবদ্ধতাসহ নানা বিষয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন মেয়র নাছির। তার জায়গায় মনোনয়ন পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, রাজনৈতিক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাকে মূল্যায়ন করলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

নগরীর বহদ্দারহাটের বহদ্দার বাড়ির সন্তান রেজাউল নগর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন, পরে হন সাংগঠনিক সম্পাদক।

মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার রাজনৈতিক জীবনের শেষপ্রান্তে এসে নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করেছেন, এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। চট্টগ্রামবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।”

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দন চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগঠন করেছেন জানিয়ে রেজাউল বলেন, “মেয়র পদে নির্বাচিত হলে আমি আমার সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করব। চট্টগ্রামবাসীর জন্য জীবন উৎসর্গ করব।”

এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেন ফজলে নূর তাপস; ফলে এই আসনে আগামী ২১ মার্চ উপনির্বাচন হচ্ছে।

ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউ মার্কেট ও হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০ আসনের এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন তৈরি পোশাক শিল্পোদ্যোক্তা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি তিনি। তার আগে তিনি বিজিএমইএরও সভাপতি ছিলেন।

তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে পুনর্নির্বাচিত হন। তার আগে মেয়র হয়েছিলেন তৈরি পোশাক শিল্পের আরেক উদ্যোক্তা আনিসুল হক।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে মহিউদ্দিন বলেছিলেন, “এই আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি, এখানে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়। আমি এখান থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করার সুযোগ পেলে নিজেকে গর্বিত মনে করব।”

এদিকে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মোজাম্মেল হোসেন গত ১০ জানুয়ারি এবং গাইবান্ধা-৩ আসনের সাংসদ মো. ইউনুস আলী সরকার গতবছর ২৭ ডিম্বের মারা যান। পরে তাদের আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনের তফসিল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তফসিল অনুযায়ী, দুই আসনের উপ-নির্বাচনে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি বাছাইয়ের পর ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে। ১ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে প্রচার। ভোটগ্রহণ হবে ২১ মার্চ।

এছাড়া গত ১৮ জানুয়ারি সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ এবং ২১ জানুয়ারি সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে যশোর-৬ আসন ফাঁকা হয়।

নির্বাচন কমিশনের রোববারের বৈঠকে এই দুই আসনের উপনির্বাচনের তফসিল নিয়েও সিদ্ধান্ত আসার কথা রয়েছে।